রাষ্ট্রপতি ভবনের ইফতার পার্টি বন্ধ করেছিলেন আব্দুল কালাম। পরবর্তীকালে তা পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয় রাম কোবিন্দের আমলে। কিন্তু একজন মুসলিম হয়েও ইফতারের আয়োজন বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন ড. কালাম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সংবিধান বলে, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বাস্তবে সেই ছবি ধরা পড়ে না, এমনটা বলা ভুল। তবে রাষ্ট্রপতি ভবনে সর্বধর্ম সমন্বয়ের ছবিটা একটু বেশিই স্পষ্ট হয়। একটা সময় অবধি সবরকমের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের চল ছিল সেখানে। বর্তমানে যদিও বন্ধ হয়েছে। একবারে না হলেও, বিভিন্ন রাষ্ট্রপতির আমলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছেদ পড়েছে। তালিকায় ছিল ইফতারও। সেই অনুষ্ঠান বন্ধ করেছিলেন খোদ আব্দুল কালাম।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, একজন মুসলিম হয়ে কেন এমন পদক্ষেপ করেছিলেন ড. কালাম?
:আরও শুনুন:
রাষ্ট্রপতি বলে বিনামূল্যে প্রাপ্তি নয়, উপহারেরও দাম মিটিয়েছিলেন আবদুল কালাম
বর্তমান ভারতে এমন প্রশ্ন ওঠাই হয়তো স্বাভাবিক! কারণ, জাতীয় দলের কোনও খেলোয়াড় যদি খেলার সময় রোজা না রাখতে পারেন, তাহলেও রীতিমতো কটাক্ষ সহ্য করতে হয় তাঁকে। তবে আব্দুল কালাম যে সময়টায় এমন পদক্ষেপ করছেন, তখন এমন কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে। হলেও যে খুব একটা সমস্যা হত তা নয়। কারণ, কারও ধর্মীয় আবেগে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশে এমন পদক্ষেপ করেননি আব্দুল কালাম। বরং ইফতারের আড়ম্বর কমিয়ে সেই টাকা খরচ করেছিলেন অন্য খাতে।
:আরও শুনুন:
ভিড় ট্রেনে নমাজ পড়ে ইফতার, মুসলিম সহযাত্রীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ালেন হিন্দুরা
সময়টা ২০০৬-এর। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সেই বছরই ড. কালাম শেষ রমজান পালন করছেন। রীতি মেনে ইফতারের আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। তাতে ডাক পেতেন নামিদামী অতিথিরা। খরচও হত বেশ। তবে সেবার নিয়ম ভাঙলেন আব্দুল কালাম। ইফতার হল ঠিকই, তবে অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটাই আলাদাভাবে। অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনা হল অনাথ শিশুদের। তাও সংখ্যায় অন্তত ২৫০ জন। সকলের সঙ্গে মিলে ইফতার উদযাপন করলেন ড. আব্দুল কালাম। তবে এখানেই গল্প শেষ নয়। কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ভবনের হিসাব নিকেশ দেখতে বসেন আব্দুল কালাম। জানতে পারেন, ইফতারের খাওয়া-দাওয়া বাবদ মোট ৫.৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সাধারণত এই খরচ সরকার বহন করে। তবে আব্দুল কালাম সেবার নিজের বেতনের টাকা থেকেই পুরোটা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, আরও ৫.৫ লক্ষ টাকা অনাথ আশ্রমে দান করেন তিনি। এভাবেই যে রাষ্ট্রপতি ভবনের ইফতার পালন বন্ধ হয়েছিল তা নয়। পরর্বতীকালে প্রতিভা পাতিল এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আমলে আগের মতোই ইফতার পালন হত। কিন্তু রাম নাথ কোবিন্দ তাঁর আমলে এই প্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ করেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে অন্যান্য ধর্মের যেসব অনুষ্ঠান ঘটা করে উদযাপন করা হতো, তাতেও পাকাপাকি ভাবেই দাঁড়ি টানেন।