কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতবর্ষে মন্দিরের কমতি নেই। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে মন্দিরের ধরণ, বিগ্রহ কিংবা পুজোর রীতি-তে বেশ পার্থক্য ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে দক্ষিণের মন্দির গুলোই উত্তরের তুলনায় আকারে বহরে বড়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মন্দিরের আকারে এমন পার্থক্য ঠিক কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একদিকে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ কিংবা হরিদ্বারের অলিতে গলিতে থাকা বিভিন্ন মন্দির। অন্যদিকে তামিলনাড়ুর মিনাক্ষী মন্দির, গুরুভাউর মন্দির কিংবা তিরুপতি বালাজির মন্দির। সহজেই পার্থক্য ধরা পড়বে। বিগ্রহের ধরণ যেমন আলাদা তেমনই আলাদা মন্দিরের সামগ্রিক গঠন। আর আকারের দিকেও রীতিমতো পার্থক্য চোখে পড়বে।
আরও শুনুন: ভজন-কীর্তনে নয়, অবসরে কীভাবে সুখের হদিশ খুঁজছেন দেশের বয়স্করা?
প্রশ্ন হচ্ছে এই পার্থক্য কেন?
আজকাল, দেশের গৌরব তুলে ধরতে মন্দিরের উদাহরণ টানেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে দক্ষিণের মন্দিরের কথাই সবার আগে চর্চায় আসে। যেমন আকারে বড়, তেমনই তার সূক্ষ্ম কারুকাজ। সবমিলিয়ে বিশ্বের দরবারে দক্ষিণের এইসব মন্দিরের কথা তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যান অনেকেই। এদিকে, উত্তরের মন্দির বেশ আলাদা। ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রসঙ্গ সরিয়ে রেখে স্রেফ স্থাপত্য নিয়ে যদি আলোচনা করা যায়, তাহলে উত্তরের মন্দিরকে বলে বলে গোল দেবে দক্ষিণের মন্দির। আর সেই পার্থক্য তৈরির কারণ খুঁজলেই সামনে আসবে কয়েকটা বিষয়। গবেষকদের মতে, সেকালে দক্ষিণ ভারতে মন্দিরে জমি দান করার চল ছিল। স্রেফ রাজা মহারাজা নয়, সাধারণ মানুষও এমনটা করতেন। এর জন্য আয়করেও বিশেষ ছাড় মিলত বলে জানা যায়। কাজেই অধিকাংশ মন্দিরের সম্পত্তিই হত আকাশছোঁয়া। এছাড়া মন্দির চত্বরে যাতে মানুষের ভিড় জমে সেই কথা ভেবে তৈরি হত বড় বড় মহল। দক্ষিণের মন্দিরে যে গোপুরম দেখা যায়, তার বেশিরভাগ স্থানীয় বড়লোকদের তৈরি করা। আরও একটা ব্যাপার এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। তা হল মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ। যেহেতু এখানকার মন্দিরের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগ যথেষ্ট পরিমানে, তাই মন্দিরের রক্ষণা বেক্ষণের দায়িত্বও তাঁরাই নিতেন। এছাড়া পূর্বপুরুষের তৈরি করা মন্দির নতুন করে গড়ে দিতেন রাজারাও। সেইসময় তার আকার বহর আরও বড় হত। এদিকে উত্তরের মন্দিরে তেমন কিছুই চোখে পড়ে না। এখানকার রাজারাও পুরনো মন্দির নতুন করে গড়ে দেওয়ার বদলে নতুন মন্দির তৈরির দিকেই বেশি ঝুঁকতেন। ফলত কালের গর্ভে হারিয়ে যেত একাধিক মন্দির। বিদেশি শত্রুর আক্রমণ ভুললেও চলবে না। এ দেশের একাধিক মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছে স্রেফ এভাবেই। অবশ্য সেই তালিকায় উত্তরের মন্দির যেমন রয়েছে, রয়েছে দক্ষিণের মন্দিরও।
আরও শুনুন: মেয়ে রাজনীতিতে নামবে! সম্পত্তি বেচে খরচ জোগালেন বাবা
শুধু তাই নয়। দক্ষিণ ভারতের মন্দির সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। কাজেই স্রেফ রাজা মহারাজাদের দাক্ষিনে তাকে টিকে থাকতে হয়নি। আকারে বহরে বেড়ে ওঠাও সেই কারনেই। সঙ্গে জুড়েছে ভক্তি আর বিশ্বাস। এ দেশে ধর্মকে সামনে রেখে কম আন্দোলন হয়নি। বিদেশি শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের ধর্মকে রক্ষা করতে কত কিছুই না করতে হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণের মন্দিরগুলো বিশেষ সুবিধা পেয়েছে এর সম্পত্তির কারণে। মন্দিরে আক্রমণ হলেও সাধারণ মানুষ নতুন করে তা গড়েছেন। উত্তরেও এমনটা হয়নি বললে ভুল হয়। তবে নানা কারণে দক্ষিণের মন্দিরের তুলনায় তার আকার বহর খানিকটা কম। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিচার করলেও দেখা যাবে, দক্ষিণের বহু মন্দির সম্পত্তির নিরিখে অনেকটা এগিয়ে। কাজেই আগামীদিনেও যে এইসব মন্দিরে একইভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে, তা বলাই বাহুল্য।