‘ট্রেন্ডস অফ অ্যাডাল্ট হাইট ইন ইন্ডিয়া’। এই গবেষণাতেই প্রকাশিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে, যখন গোটা পৃথিবীর মানুষের উচ্চতা বাড়ছে, তখন কমতে শুরু করেছে ভারতীয় পুরুষ ও মহিলাদের উচ্চতা। কেন কমছে দেশের মানুষের গড় উচ্চতা? কী বলছে গবেষণা?
যেখানে গোটা পৃথিবীর মানুষের গড় উচ্চতা বাড়ছে, সেখানে ভারতীয়দের গড় উচ্চতা নাকি কমতে শুরু করেছে। সত্যিই কি তাই? একটি সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু তেমনটাই দাবি করছে। যেখানে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ভারতের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের উচ্চতা ১.১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
বর্তমান গবেষণার নাম ‘ট্রেন্ডস অফ অ্যাডাল্ট হাইট ইন ইন্ডিয়া ১৯৯৮ থেকে ২০১৫’। যেটি ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি অ্যান্ড হেলথ সার্ভে’র উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৫-১৬ পর্বে ভারতের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের গড় উচ্চতা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। উচ্চতা সবচেয়ে কমেছে গাঁ-গঞ্জের দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের।
আরও শুনুন: একটা গ্রামের সকলেই কোটিপতি, এমন গ্রাম কোথায় আছে জানেন?
গবেষণাটি জানিয়েছে, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী মহিলাদের এবং পুরুষদের গড় উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে। মহিলাদের গড় উচ্চতা প্রায় ০.১২ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে পুরুষদের গড় উচ্চতা ১.১০ সেন্টিমিটার কমেছে। এক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ তাও স্পষ্ট হয়েছে। কারণ, যেখানে গরিব পরিবারের মেয়েদের উচ্চতা কমেছে, সেখানেই ধনী পরিবারের মহিলাদের উচ্চতা কিন্তু বেড়েছে। শহুরে ধনী পরিবারের মহিলাদের উচ্চতা বেড়েছে ০.২০ সেমি, অন্যদিকে গ্রামের বিত্তবান পরিবারের মহিলাদের উচ্চতা বেড়েছে ০.০৬ সেমি। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হিসেবও মিলছে না। শহর অঞ্চলে বসবাস করা ২৬ থেকে ৫০ বয়সী পুরুষদের উচ্চতা কমেছে ২.০৪ সেমি।
এভাবে ভারতীয়দের উচ্চতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ অপুষ্টি তো বটেই। তবে কিনা জিনগত কারণও রয়েছে। দেখা গিয়েছে, যেসব শিশুর মা বা বাবার উচ্চতা কম। বড় হয়ে সেই শিশুর উচ্চতাও কমই থাকছে। তবে জীবনধারা, পুষ্টি, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলিও সামনভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন গবেষকরা। গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চতা হ্রাসের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ কারণ কিন্তু জিনগত। তবে, ২০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে অন্য কারণও রয়েছে।
আরও শুনুন: এমনও হয়! মরণের ওপারে ৪৫ মিনিট, আচমকাই জীবনে ফিরলেন মহিলা…
ভারতীয়দের উচ্চতা কমে যাওয়ার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না গবেষকরা। বর্তমান সার্ভের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা বলেছেন, সরকারের উচিত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। সমস্যার সমাধান করা উচিত। তবে শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে পুষ্টির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা বলছেন, সরকারকে বুঝতে হবে, অপুষ্টি মানুষের গড় উচ্চতা হ্রাসের একটা বড় কারণ। সরকারি নীতির পরিবর্তন দরকার। কমাতে হবে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্যও। অন্যথায় আগামী সময়ে আরও বড় ফল ভোগ করতে হবে। এই বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যান রীতিমতো চিন্তার উদ্রেক করে। কী বলছে সেই পরিসংখ্যান?
বিশ্ব ব্যাংকের মতে, ছোটবেলার অপুষ্টির কারণে যদি একজন মানুষের ১ শতাংশ উচ্চতা কমে যায়, তবে তাঁর অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ১.৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। অর্থাৎ কিনা, দেশের মানুষের শারীরিক বিকাশ দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে!