গল্পের গরু গাছে ওঠে শুনেছেন! তবে বাস্তবেও ছাগল গাছে চড়ে, এমনটা বোধহয় শোনেননি। তবে এমনও হয়! কোথায় থাকে এমন সব গাছপ্রিয় ছাগলের দল? আসুন, শুনে নিন।
ধু ধু মাঠের মাঝখানে চড়ে বেড়াচ্ছে একপাল ছাগল। এ দৃশ্য খুবই পরিচিত। কিন্তু ধরুন যদি দেখেন, মাঠের মাঝখানে গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে হেঁটে বেড়াচ্ছে গোটা কয়েক ছাগল। অবাক হবেন নিশ্চয়ই।
তবে উত্তর আফ্রিকার মরোক্কোয় এ দৃশ্য অতি সাধারণ। সেখানে প্রায়শই গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে চড়ে বেড়ায় ছাগলের পাল। বিশেষত মরোক্কোর দক্ষিণে সুস মাসা ড্রা অঞ্চলে তো বটেই। প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর তো বটেই, তবে এই গেছো ছাগলদের দৌলতেই দিন কে দিন পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে জায়গাটি।
বাংলা বাগধারা অনুযায়ী, গল্পের গরুকে গাছে তোলা মানে ব্যাপারটা আদ্যপান্ত আষাঢ়ে, অবাস্তব কিছু একটা। তবে এ ছাগল বাস্তবেই গাছে চড়ে। সাধারণ ভাবে গরু, ছাগলের মতো প্রাণীদের গাছে ওঠার কথাই নয়। তবে কীসের টানে গাছের মগডালে চড়ে এ ছাগল।
আরও শুনুন: জাঙ্কফুডের নেশা সর্বনাশা! নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হল সামুদ্রিক সিলকে
ঠিকই ধরেছেন। সুস্বাদু ফলের লোভ। আর্গন অয়েল কথাটি শুনেছেন নিশ্চয়ই। বহু প্রসাধনী সামগ্রীতেই ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদানটি। তা এই আর্গান তেল আসে আর্গানিয়া ফলের বীজ থেকে। আর এই সুমিষ্ট ফলের লোভেই গাছে চড়ে ছাগলেরা। আশ্চর্যের ব্যাপার, এই আর্গানিয়া গাছ নাকি বেশ কাঁটাযুক্ত। তবে সেসবের পরোয়া করে না মরোক্কোর গেছো ছাগলেরা। জুন মাস নাগাদ পাকতে থাকে গাছের ফলগুলি। তখন এ সব ছাগলদের আর পায় কে। তড়তড়িয়ে তারা চড়তে লাগে গাছের মগডালে। সুমিষ্ট আর্গানিয়া ফল ধরে মুখে পুরে দেয় পটাপট।
তা ছাগলের আনাগোনা মানেই তো ফসলের ক্ষতি। এইসব গেছো ছাগলদের উৎপাতে নিশ্চয়ই আর্গেনিয়া গাছের মালিকেদের জীবন অতিষ্ট হওয়ার জোগার। না, বরং উল্টোটাই। কৃষকেরাই আরও বেশি করে ছাগলদের উৎসাহ জোগান গাছে উঠে ফল খাওয়ার জন্য। আপনারা কোপি লুয়াক বা ব্ল্যাক আইভরি কফির কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন? দুটিই অত্যন্ত বিরল এবং দামী কফি বলে পরিচিত। গন্ধগোকুল ও হাতি, এই দুই প্রাণীর বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা হয় এই কফির দানা। ঠিক তেমন ভাবেই আর্গন অয়েল তৈরিতে সাহায্য করে এই গেছো ছাগলেরাও। আর্গানিয়া গাছের মিষ্টি ফলটি খেলেও তার বীজটি হজম করতে পারে না ছাগলের দল। তাই তা মলের সঙ্গে বের করে দেয় তারা। তবে ছাগলের পরিপাক রসে ভিজে বীজগুলি হয়ে ওঠে আরও নরম। পরে সেগুলি থেকেই নিষ্কাশন করা হয় আর্গন অয়েল। অর্থাৎ এই তেল উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই মরোক্কীয় ছাগলেরা। ত্বকের যত্নে এই তেলের ভূমিকা নাকি অপরসীম। ফলে প্রসাধনী সামগ্রীর বাজারে এই আর্গন অয়েলকে ম্যাজিক অয়েল বা তরল সোনাও বলেন অনেকে। ভিটামিন এ, ই থেকে শুরু করে নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডে ঠাসা এই বিশেষ তেলটি।
আরও শুনুন: পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ নাকি ইনি! রাক্ষুসে খিদের কারণেই হয়েছিলেন গুপ্তচরও
আর্গন অয়েল বাজারের জন্য তো বটেই, মরোক্কোর পর্যটনের জন্যও এক আশীর্বাদ এই গেছো ছাগলেরা। গাছের মগডালে ছাগলের আনাগোনা দেখতেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। সিনেমার শুটিংয়ের জন্যও বেড়েছে এই জায়গার আকর্ষণ। আর সেই সুযোগ নিচ্ছেন এখানকার কৃষকেরাও। পর্যটকদের সামনে ছাগলদের গাছে চড়িয়ে পকেট ভরাচ্ছেন তাঁরাও। তার জন্য ছাগলদের দিনভর রোদে বেঁধেও রাখেন নাকি তাঁরা। ফলে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মরোক্কোর ছাগলদের দুর্দশাও যে বেড়েছে বেশ খানিকটা, তা বললে বোধহয় খুব ভুল হবে না।