মেয়েদের অন্তর্বাস জমিয়ে রাখতে ভালবাসত পুরুষটি। নানা রঙের, নানা ধরনের অন্তর্বাস মাঝে মাঝেই চাপিয়ে নিত নিজের গায়েও। এতেই নাকি অদ্ভুত যৌন সুখ পেত সে। আর এহেন বিকৃত যৌনতার নেশাই ডেকে এনেছিল খুন করার অভ্যাসকে। শুনে নিন এই সিরিয়াল কিলারের গল্প।
পড়শি তরুণী কখন জামা বদলায়, সে কথা খুব ভাল করে জানত এই যুবক। সেই সময়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে উঁকি দিতে যে কী ভাল লাগত তার! আড়াল থেকে দেখা যাচ্ছে একটা গোটা মেয়ের নগ্ন শরীর… সেই দৃশ্যের কথা ভাবতে গিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ত সে। সত্যি বলতে, সরাসরি যৌনতা তার খারাপ লাগে না, কিন্তু ওতে আসলে কোনও মজা নেই। একটু অন্যরকম কিছু না হলে আর সুখ কোথায়! তাই সে মনে মনে কল্পনা করে, কোনও মেয়ের সঙ্গে জোর করে যৌনতায় লিপ্ত হলে কেমন লাগবে। কেমন লাগবে যদি সেই সময়েই তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা যায়। মাঝে মাঝে মেয়েদের অন্তর্বাস গায়ে চাপিয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়ে আয়নার সামনে। এবার নিজেকেই কল্পনা করে ওই তরুণীর জায়গায়, যার সঙ্গে উদ্দাম যৌনতায় মেতে উঠেছে কোনও পুরুষ।
আরও শুনুন: স্তনে-নখে মাখানো বিষ, সম্মোহনে সুন্দরী বিষকন্যাকে স্পর্শ মাত্র মৃত্যু অবধারিত পুরুষের
অথচ তাকে দেখে এসব কথা বোঝার উপায়ই নেই। জীবনটা একেবারেই আলুভাতে মার্কা। ১৯৪৫ সাল, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে বছর শেষ হল, সেই বছরেই আমেরিকায় জন্ম তার। ছাপোষা পরিবার। প্রথমে বায়ুসেনায় চাকরি করেছিল কিছুদিন, তারপর এদিক ওদিক নানারকম কাজ। কখনও ক্যাম্পিং-এর সরঞ্জাম তৈরির কারখানায়, কখনও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। এর মধ্যে ফৌজদারি আইন নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হয়েছে সে। বিয়েও করেছে, দুটি বাচ্চাকে নিয়ে বেশ সুখী পরিবার। প্রায়ই গির্জায় যায়। পড়শিরা বলে সে নাকি খুবই ধার্মিক, ভাল মানুষ।
এসব শুনে মনে মনে হাসে যুবক। ডেনিস রেডার নামের যে যুবককে আসলে তার পড়শিরা চেনে, তারা কি জানে, এর মধ্যেই সে খুন করে ফেলেছে একাধিক তরুণীকে? তবে সেই খুন তো আসলে ডেনিস করেনি, করেছে ‘বিটিকে কিলার’। বিটিকে, অর্থাৎ কিনা, ‘বাইন্ড, টর্চার অ্যান্ড কিল’। বেঁধে রাখো, অত্যাচার করো এবং মেরে ফেলো- সোজা নীতি ডেনিসের। এইভাবেই নাকি সে যৌন সুখ পায়। এই নেশায় ছোটবেলায় সে পশুদের উপর অত্যাচার করত। আর বড় হয়ে সেই অত্যাচারের নিশানা হয়েছে মেয়েরা।
আরও শুনুন: কিশোরীদের রক্তে স্নান, ৬০০ জনকে খুন, কুখ্যাত মহিলা সিরিয়াল কিলারের রুদ্ধশ্বাস গল্প
ডেনিস যখন প্রথম খুনটা করে, সেটা ছিল ১৯৭৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। নিজের এলাকাতেই এক মহিলাকে লক্ষ্য করেছিল সে। একসময় কিছুদিন দুজনে একসঙ্গে কাজ করেছিল। খুন করতে গিয়ে অবশ্য শুধু মহিলাকেই নয়, দুই শিশু-সহ ওই পরিবারের মোট চারজনকে শেষ করে দেয় সে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে বীর্য পাওয়া গিয়েছে। আর অন্য কিছু নয়, চুরি হয়েছে কেবল কিছু অন্তর্বাস।
সেই বছরেরই এপ্রিল মাস। ফের নিজের এক প্রাক্তন সহকর্মীকেই নিশানা করল ডেনিস। ২১ বছরের এক তরুণী। দুটি খুনের ঘটনাস্থলেই মৃতদের শরীরের পাশে একটি হাতে আঁকা ছবি খুঁজে পায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এই আঁকিবুঁকি দেখে মহিলার ছবি বলে মনে হলেও, দেখা যায় তার পিছনে লেখা ‘বিটিকে’। কিন্তু পুলিশ সে বিষয়টিকে আদৌ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। আর তাতেই চটে যায় ডেনিস। ৭৭ সালে আরও দুই তরুণীর প্রাণ যায় ডেনিসের হাতেই। এরপরেও আরও কয়েকজনকে খুন করেছিল, বা খুনের চেষ্টা করেছিল ডেনিস। অন্তত দশজনের প্রাণ গিয়েছিল এই সিরিয়াল কিলারের হাতে, এমনটাই আন্দাজ পুলিশের।
আসলে যৌনতার সময়েও যে কাউকে অত্যাচার করে আনন্দ পেতে চায়, সে তো আসলে নিজেকে আরও, আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে চায় অন্য পক্ষের কাছে। ডেনিসের স্বভাবেই ছিল এই গুরুত্ব পাওয়ার চেষ্টা। সে মনে করেছিল, একের পর এক খুন করে সে হইচই ফেলে দেবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় ছটফট করছিল ডেনিস। প্রথম হত্যাকাণ্ডটির বিবরণ দিয়ে একটি চিঠি লিখে সে চিঠিটি রেখে দিয়েছিল এলাকার লাইব্রেরিতে। পরে স্থানীয় টিভি চ্যানেলেও একটি চিঠি পাঠায় সে। সাফ প্রশ্ন করে, ‘খবরে আসার জন্য আর কত খুন করতে হবে আমাকে?’
আরও শুনুন: বিষাক্ত সঙ্গমে ঘায়েল হবে শত্রু, বিষ পান করেই ‘অস্ত্র’ হয়ে উঠত বিষকন্যারা
একদিকে বিকৃত যৌনতার অভ্যাস, আরেকদিকে খবরে আসার নেশা। দুয়ে মিলেই একের পর এক খুন করেছিল ডেনিস রেডার। কিন্তু তার ভালমানুষের মুখোশটার আড়াল সরিয়ে তাকে সন্দেহ করেনি কেউই। প্রথম খুনের ৩০ বছর পর, ২০০৪ সালে, এক মার্কিন সংবাদমাধ্যম দাবি করে বসে, বিটিকে কিলার হয়তো নিজেই মৃত। গুরুত্ব পাওয়ার জন্য এত চেষ্টা, তারপরেও তাকে এইভাবে নাকচ করে দেওয়া হবে, এ কি ডেনিসের সহ্য হয়? তড়িঘড়ি সে ওই পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে খুনের স্মারক পাঠায়। তখনই দেখা যায়, খুনের স্মারক হিসেবে সে জমিয়ে রেখেছে অন্তর্বাসও। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে খুনের যাবতীয় প্রমাণ একটি ফ্লপির মাধ্যমে পুলিশের কাছে পাঠায় ডেনিস। আর এই ফ্লপি পাঠানোই কাল হয় তার। সেই সূত্র ধরেই ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ডেনিসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথম খুনের ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বীর্যের পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয় যে, ডেনিসই খুনি। এতদিন পরে নিজের কথা বলার সুযোগ পেয়ে ডেনিসও সগর্বে ঘোষণা করে, কী কী কাণ্ড সে ঘটিয়েছে। বিচারে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা পায় সে। আর এইসঙ্গেই শেষ হয়ে যায় বিটিকে কিলার-এর হাড়কাঁপানো হত্যালীলা।