মেয়েদের যতই ঘরের গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে চাওয়া হোক, তারা বারবার সেই বেড়া ভেঙে বেরিয়েছে। নিজেদের শর্তে বেঁচেছে। বাইরের জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাপ রেখেছে নিজেদের। এমনকি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এমন মেয়ের সংখ্যাও কম নয়। শোনা যাক তেমনই দুই মেয়ের কথা।
বিদেশি শাসকের পদানত একটা দেশ। বারবার মাথা তোলে স্বাধীনতা সংগ্রাম, আর বারবারই তাকে নৃশংস উপায়ে দমন করে ভিনদেশি শাসকেরা। গণহত্যা করা হয় হাজার হাজার মানুষকে। অবশেষে পরাজিত মানুষেরা বেছে নেয় চোরাগোপ্তা আক্রমণের পথ। আর সেই যোদ্ধাদের দলে সামিল হয় মেয়েরাও।
আরও শুনুন: বন্দুক হাতে জমিদারি সামলাতেন ঠাকুরবাড়ির এক মেয়ে, চেনেন তাঁকে?
গল্পটা চেনা চেনা লাগছে? মিল পাচ্ছেন নিজের দেশের সঙ্গে? হ্যাঁ, এ গল্প স্বাধীনতারই। তবে ভারতের নয়। সেই দেশটার নাম আর্মেনিয়া। তার মসনদে তখন অটোমান শাসক। উনিশ শতকের শেষদিকে সেই দেশে গড়ে ওঠে দুটি বিপ্লবী দল। তাদের প্রতিরোধ একেবারে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে ১৮৯৪ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত অকাতরে গণহত্যা চালায় শাসক দল। তৎকালীন সুলতান দ্বিতীয় আবদুলহামিদ-এর নাম অনুসারে এই ঘটনাকে ইতিহাস মনে রেখেছে হামিদিয়ান ম্যাসাকার হিসেবেই। আর এই সময়েই, ১৮৯৫ সালে তোলা হয়েছিল একটি বিশেষ ছবি।
কোন ছবি? ছবিটি দুই মহিলার। একজন দাঁড়িয়ে আছেন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে। তাঁদের চুল খোলা। কিন্তু পরনে যোদ্ধার বেশ, পায়ে বুট। হাতে রাইফেল। কাঁধে ঝোলানো বুলেটের মালা। কোমরের বেল্টে গুঁজে রাখা রিভলভার। সাধারণত এই ছবির নামকরণ করা হয়ে থাকে, অটোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার আগে রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে দুই আর্মেনিয়ান মহিলা। কিন্তু এই দুই মহিলার পরিচয় সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানা যায় না। বাঁদিকের মহিলার কেবল নাম জানা গিয়েছে, এঘিসাপেত সুলতানিয়া। দ্বিতীয়জনের পরিচয় আজও রহস্য। এমনকি, তাঁরা আদৌ যুদ্ধে গিয়েছিলেন, নাকি এমনিই শখ করে এমন ছবি তুলিয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে তাঁদের হাতে থাকা রাইফেল-রিভলভারে কিছু অসংগতি দেখে। যা দেখে মনে হতেই পারে যে ওগুলি নকল।
আরও শুনুন: ঘোল খাইয়েছিলেন পাকিস্তানকে, সিনেমাকেও হার মানায় RAW এজেন্ট রবিন্দরের জীবন
কিন্তু ওই ছবিটির পিছনে লেখা একটি শব্দই এইসব সন্দেহকে দমিয়ে দেয়। ছবির পিছনে লেখা রয়েছে, ‘স্যুভেনির’, অর্থাৎ স্মারক। যুদ্ধের স্মারকের কথাই কি বোঝাতে চেয়েছেন তাঁরা? তবে কি তাঁরাও ‘ফিদায়ি’, অর্থাৎ গেরিলা যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন? হামিদিয়ান ম্যাসাকার, এবং কয়েক বছর পর আর্মেনিয়ান গণহত্যার ঘটনায় অধিকাংশ আর্মেনিয়ান পুরুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় গেরিলা আক্রমণ করে লড়াই চালিয়ে যান এই ‘ফিদায়ি’-রা, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মেয়ে। ‘ফিদায়ি’ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘ফিদায়েঁ’ থেকে। মহাভারতের সংশপ্তকদের মতো আত্মদানের ব্রত নিয়েছিলেন এঁরা। এই দুই মহিলা অবশ্য শেষমেশ মারা যাননি। বরং তাঁরা আমেরিকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, এই তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁদের এই ছবিটি নজির রেখে যায়, যে, চাইলে শিকল ভাঙতে পারে মেয়েরাও।