পয়লা জানুয়ারি মানেই শুরু আবার একটা নতুন বছরের। হ্যাঁ, এ কথা বাচ্চা থেকে বড় সকলেই জানে। কিন্তু জানেন কি, একসময় মোটেই সবাই এ কথা জানত না। কিংবা মানতও না। তাই কারও নতুন বছর শুরু হত মার্চ মাসে, কারও বা এপ্রিলে! আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেসব গল্প।
দিন-মাস-বছরের হিসেব করা হবে কীভাবে, এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল প্রাচীন সভ্যতাগুলির আমলেই। তাকে মোটামুটি একটা গোছানো রূপ দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তার আগে রোমান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হত মার্চ মাস থেকে। সেই ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন প্রথম রোমান রাজা রোমিউলাস। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে আরও তিনটি মাস যোগ করে বছরে আরও ৫০ দিন বাড়িয়ে দেন। তখন থেকে বছরে দুদিন নববর্ষ উদযাপিত হত, জানুয়ারি এবং মার্চ মাসের প্রথম দিনে। কিন্তু সিজার প্রবর্তিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে বছরের প্রথম মাসের মর্যাদা দেওয়া হয় জানুয়ারিকে। যেহেতু রোমানদের ফটকের দেবতা জানুস, তাই জানুয়ারি মাসকেই নতুন বছরের ফটক বা দরজা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। সেই থেকে পয়লা জানুয়ারিতেই নববর্ষ উদযাপন করা হতে থাকে।
আরও শুনুন: করোনাকাঁটায় দোকানের কেক কিনতে অনীহা! বড়দিনে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু কেক
কিন্তু এই মত সকলে মেনে নিয়েছিলেন, এমনটা নয় মোটেই। মধ্যযুগের ইউরোপেই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে উড়িয়ে দিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের দিনক্ষণ মেনে নববর্ষ পালন করতে শুরু করলেন অনেকে। খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী, যিশুখ্রিস্টের মা মারিয়া তাঁর অ্যাঞ্জেল গ্যাব্রিয়েলের কাছ থেকে তাঁর সন্তান হওয়ার সংবাদ পান ২৫ মার্চ তারিখে। সুতরাং এই বিশেষ দিনটিতেই নববর্ষ উদযাপন করতে শুরু করেন খ্রিস্টান ধর্মের অধিকাংশ মানুষ। এ ছাড়া খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতেও কোনও কোনও জায়গায় ছাড়া ছাড়া ভাবে নববর্ষ উদযাপিত হত। এদিকে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তিও ছিল। সেসব মেটানোর জন্য ক্রিস্টোফার ক্ল্যাভিয়াস নামের এক জ্যোতির্বিদকে ক্যালেন্ডার সংশোধনের দায়িত্ব দেন পোপ গ্রেগরি দ্য থার্টিন। সংশোধিত নতুন ক্যালেন্ডারের নাম হয় তাঁর নামেই, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। যে ক্যালেন্ডার এখনও পর্যন্ত মেনে চলেছি আমরা।
আরও শুনুন: গোপনে উপহার দিতেন শিশুদের, ঘটাতেন অলৌকিক ঘটনা… সান্তা ক্লজ কি আসলে ইনিই?
কিন্তু এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের আগে কেবল ২৫ মার্চ নয়, নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে মনে করা হত আরেকটি দিনকেও। কোন দিন জানেন? যাকে আজ আমরা এপ্রিল ফুল বলে চিনি। আসলে একসময় এপ্রিল মাসের পয়লা থেকেই বছর শুরু হত, এমন একটা মত আছে। সত্যি বলতে শুধু রোমান বা খ্রিস্টীয় সংস্কৃতিতে নয়, বিশ্বের আরও বেশ কিছু জায়গায় এপ্রিল মাস থেকেই বছর শুরু হয়। বাঙালিদের পয়লা বৈশাখও কিন্তু আসে ইংরেজি মাস এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়েই। ১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি নতুন ক্যালেন্ডারের কথা ঘোষণা করার পর পয়লা জানুয়ারি হয়ে যায় নতুন বছরের প্রথম দিন। কিন্তু জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের মতোই, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের এই নিয়ম মানতেও অনেকের আপত্তি ছিল সেকালে। প্রোটেস্ট্যান্টদের মনে হয়েছিল এ বোধহয় কোনও ক্যাথলিক ষড়যন্ত্র। তাঁরা পুরনো প্রথামতো পয়লা এপ্রিলকেই বছরের পয়লা তারিখ বলে মেনে চলছিলেন, বাকিদের কাছে যা ছিল হাসির খোরাক। আর এই ঘটনা থেকেই পয়লা এপ্রিল তারিখে ‘এপ্রিল ফুল’-এর ধারণা এসেছে বলেও মত অনেকের।