এক চুটকি সিন্দুর-এর দাম জানতেন মহিলা। তবে বোঝেননি একটি ভোটের দাম কী। স্বামীর জয় কামনা করে মন্দিরে গিয়েই ভোট দিতে পারেননি তিনি। আর সেই একটি ভোটই বদলে দেয় হার-জিতের হিসেব।
ভোটের বাজারে বারবার বলা হয়, এভরি ভোট কাউন্টস। অর্থাৎ, প্রত্যেকটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ। সে কথা যে নেহাত ফেলনা নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে এক-একটি ভোটের ফলাফল। যেখানে মাত্র একটি ভোটই শেষমেশ নির্ধারণ করে দিয়েছে জয় পরাজয়।
আরও শুনুন:
এক্সিট পোল কি ভোল বদলায়! যে ৫ বার ভুল হয়েছিল বিলকুল
এমনই একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন মুখ্য আধিকারিক, এস ওয়াই কুরেশি। তিনি জানিয়েছিলেন, কীভাবে মাত্র একটি ভোটের কারণেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ফসকে গিয়েছিল রাজস্থানের কংগ্রেস নেতার। সেটা ২০০৮ সাল। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সি পি যোশী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন নাথদ্বারার এই প্রার্থীই। কিন্তু মাত্র একটি ভোটে হেরে গিয়ে আর সে আশা পূরণ হয়নি তাঁর। কম মার্জিনে জয় পরাজয় হয় বটে, কিন্তু সেখানেও অন্তত কয়েকশো ভোটের ব্যবধান থাকে বইকি। তা বলে মাত্র একটি ভোটে কেউ হেরে যেতে পারেন? এ ফলাফল প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি যোশীর। তিনি ব্যালট পুনর্গণনার আবেদন জানান। তাতে ফল বদলায়নি, বলাই বাহুল্য। এরপর প্রতিটি মেশিন পরীক্ষা করার কথাও বলেন যোশী। কিন্তু যাই করা হোক না কেন, তাঁর ভাগ্য অপরিবর্তিতই রয়ে গিয়েছিল সেবারে।
যোশীর এই ভাগ্যবিপর্যয়ের নেপথ্য নায়িকা বলা যায় তাঁর স্ত্রীকেই। আসলে স্বামীর জয় নিয়ে এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন তিনি, যে, ভোট দিতে না গিয়ে চলে যান মন্দিরে পুজো দিতে। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের মেয়েও। ফলে দুজনের কেউই ভোট দিতে পারেননি। কংগ্রেস সে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, হেরে যান কংগ্রেস সভাপতি নিজেই।
এই একবার মাত্র নয়। শুনতে যত আশ্চর্যই লাগুক, মাত্র একটি ভোটে হেরে যাওয়ার ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে এ দেশের নির্বাচনে। ২০০৪ সালে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আর. ধ্রুবনারায়ণ জনতা দলের প্রার্থীকে হারান এক ভোটে। ১৯৯৯ সালে আস্থা ভোটে হেরে গিয়েছিলেন খোদ অটলবিহারী বাজপেয়ী, এক ভোটেই।
আরও শুনুন:
ভোট দিতে গেলেন না! বদলে দিতে হতে পারে জরিমানাও, জানেন কি?
গণতন্ত্রে প্রত্যেক মানুষের মতামতকে সম্মান করা হয় বলেই, গির অরণ্যে একজনের জন্য পোলিং বুথ তৈরি করে কমিশন। অরুণাচল প্রদেশে ইন্দো-চিন সীমান্তেও দুজনের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কমিশন। এই তথ্য দিয়েই প্রাক্তন কমিশন-কর্তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, গণতন্ত্রে একটি ভোটও কতখানি জরুরি। কোনও একটি ভোটই যে শেষ মুহূর্তে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে, সে কথাই তাই মনে রাখা উচিত রাজনীতিকদের।