অফিস যাওয়ার তাড়া নেই। রান্নার করার ঝক্কিও পোহাতে হয় না আর। বাজার না গেলেও চলে। সারাদিন ঘরের মধ্যে কাটালেও কারও অসুবিধা নেই। সমীক্ষা বলছে, এমনই একটা জীবন কাটাচ্ছেন দেশের বেশিরভাগ প্রৌড়। আর এক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠছে মোবাইল ফোন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বয়স বাড়লে সঙ্গী কমে। একে একে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান প্রিয় মানুষেরা। এমন একটা বয়সে কী করেন সকলে? অনেকেই বলবেন, তাঁরা তীর্থে যান, নিয়মিত ভজন শোনেন কিংবা আশ্রমে ঘুরে সময় কাটান। কিন্তু বাস্তবে সেই ছবি ধরা পড়ছে না। অন্তত আমাদের দেশে তো নয়ই।
খাতায় কলমে তাঁরাই বাড়ির প্রধান। অথচ বাড়ির সবথেকে বয়স্ক সদস্যরা প্রায় সব কাজেই ব্রাত্য। নিজেরাও যে তেমন জুড়ে থাকতে চান তা নয়। কেউ কেউ দায়িত্ব নিয়ে কিছু কাজ করেন। তবে বেশিরভাগই নিজেদের সময়টা নিজেদের মতো করেই কাটান। সমীক্ষা বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশই বয়স্ক। আগামীদিনে সেই পরিসংখ্যান আরও বাড়বে বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই আবহে সামনে এসেছে এত সংখ্যায় বয়স্করা কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেই তথ্য। অনেকেরই ধারণা রয়েছে, বয়স্ক মানেই ধর্ম কর্ম করে সময় কাটাবেন। আবার সিনেমা সিরিজে বয়স্কদের যে ছবি ধরা পড়ে সেখানে তাঁরা বেশ উৎফুল্ল। সকালে উঠে পার্কে যাচ্ছে, প্রাণ খুলে হাসার জন্য যাচ্ছেন লাফিং ক্লাবে, তারপর ভজন-কীর্তন শুনে কিংবা আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরে ঘুরে সময়টা কাটিয়ে ফেলছেন। তবে বাস্তবে যে ছবি ধরা পড়ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ বয়স্ক মানুষের একমাত্র সঙ্গী মোবাইল ফোন। সময় কাটছে সোশাল মিডিয়ায় ঘুরে ঘুরে। কেউ কেউ সারাদিন এক জায়গায় বসে কাটিয়ে দিচ্ছেন ওইভাবেই। দেশে কী চলছে, চারপাশে কী চলছে সে সবই তাঁরা জানছেন ওইভাবে। কিন্তু সেইভাবে কোনও জায়গা পাচ্ছেন না নিজেদের মত প্রকাশ করার। বলা ভালো, তাঁরা চাইছেনও না তেমন কিছু করতে। সবটা জানলেই তাঁদের চলে যাবে। এছাড়া সিরিয়াল, সিনেমা তো রয়েছেই। অনেকে খেলা দেখছেন চুটিয়ে, শুধু শর্ত একটাই বাইরে যাবেন না। ঘরে বসে মোবাইলে যা দেখার দেখবেন। যোগ্য দোসর হিসাবে থাকছে রিলস।
সমীক্ষা বলছে, গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ বয়স্ক মানুষ এশিয়ার বাসিন্দা। তার মধ্যে ভারতের অবদান অনেকটাই বেশি। আর এই এত সংখ্যক বয়স্ক নিজেদের কার্যত দূরে সরিয়ে রেখেছেন সমাজের মূল শ্রোতের বিভিন্ন বিষয় থেকে। রাজনৈতিক আলোচনা হোক অন্য কিছু, সেইভাবে বয়স্কদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। তাই এই অংশের মানুষদের উন্নতি নিয়েও তেমন ভাবনা নেই কারও। একজন নয়, বেশ কয়েকজনের উদাহরণ তুলে ধরে সাম্প্রতিক এই বদল প্রত্যক্ষ হয়েছে এক সংবামাধ্যমের লেখায়। সেখানেই দাবি করা হয়েছে, বয়স্ক মানুষরা আদতে সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। আর এভাবে তাঁরা যে ভালো নেই এমনটাও নয়। বেশিরভাগই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। কেউ কেউ সন্তানের উপর নির্ভরশীল। তাতেও সমস্যা কিছুই নেই। বিশেষত যারা বড় শহরে থাকছেন তাঁদের মধ্যে এই অর্থ সমস্যার ছাপ তেমন ধরা পড়ছে না। তাই অবসরে মোবাইল ফোনই তাঁদের সঙ্গী হয়ে উঠছে। স্রেফ বিনোদনের কথা বাদ দিলেও মোবাইল ফোন তাঁদের নিতান্তই প্রয়োজন। কারণ বয়সকালে এই যন্ত্রই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে জুড়ে রাখার সেতু হিসেবে কাজ করছে। যারা সন্তানদের কাছে থাকেন না, তাঁদের কাছে এছাড়া আর কোনও উপায় নেই যোগাযোগ রাখার। তাই উত্তরোত্তর মোবাইল প্রীতী বেড়ে চলেছে। ভজন, কীর্তনে হলেও সেসব মোবাইলে। আর যারা সেসবে আগ্রহী নন তাঁদের ভরসা সোশাল মিডিয়া।