একসময় ‘বালিকা বধূ’ নামের একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকের পটভূমি ছিল গ্রামীণ রাজস্থান। যেখানে দেখা গিয়েছিল, নিতান্ত বালিকা কিংবা কোনও কিশোরীর সঙ্গে কোনও বয়স্ক পুরুষের বিয়ে হওয়ার ঘটনাও খুব স্বাভাবিক। সেই প্রবণতাকেই প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে রাজস্থানের ‘আতা সাতা’ নামের এক বিশেষ প্রথা। শুধু তাই নয়, অসংখ্য তরুণীর জীবন বিষিয়ে তুলছে এই প্রথাটি। কী এই প্রথা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিয়ের বাজারে মেয়েদের নিজস্ব মতামতকে এখনও স্বীকৃতি দেওয়া হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। আর সেই কথাকেই যেন প্রমাণ করে দেয় রাজস্থানের এই পুরনো প্রথা। যতই পুরনো হোক না কেন, রাজ্য জুড়ে এখনও রমরমিয়ে চলছে এই প্রথা, যার পোশাকি নাম ‘আতা সাতা’। আর এই প্রথাতেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সে রাজ্যের অসংখ্য তরুণীর।
কী এই প্রথা?
আরও শুনুন: দেবী নন, তারকা! অভিনেত্রীর নামেই মন্দির গড়ে প্রতিমা বসালেন ভক্তরা
এই প্রথায় কোনও বিয়ের ক্ষেত্রে ধার্য করা হয় এক বিশেষ শর্ত। দুই পরিবারের কেবল দুজন ছেলে মেয়ের মধ্যে বিয়ে হয় না এক্ষেত্রে। বরং বিয়ের আসর বসে দু-জোড়া পাত্র পাত্রীর মধ্যে। আসলে যে পরিবারের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, সেই পরিবারের কোনও ছেলেরও বিয়ে হয় একইসঙ্গে। আর সেই বিয়েটি সম্পন্ন হয় মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির কোনও মেয়ের সঙ্গেই। সাধারণভাবে বলা যায়, কনের দাদার সঙ্গেই বিয়ে হয় বরের বোনের। এক্ষেত্রে ওই কিশোরী কিংবা তরুণীর বয়স, তার নিজস্ব মতামত, কোনও কিছুকেই গ্রাহ্য করা হয় না। কারণ এই ধরনের একটি বিয়ের শর্তই থাকে ওই পালটা বিয়েটি। সেখানে ৭০ বছরের কোনও পুরুষের সঙ্গে ১৬-১৭ বছর বয়সের একটি কিশোরীর বিয়ে হওয়াকেও কেউ অস্বাভাবিক বলে মনে করে না। কিন্তু সেই প্রথার জালে জড়িয়ে কিন্তু সেই প্রথার জালে জড়িয়েই নষ্ট হয়ে যায় একাধিক তরুণীর জীবন।
শুনতে আশ্চর্য লাগছে তো? কিন্তু বাস্তবে এমনটাই হয়ে আসছে রাজস্থানের একাধিক অঞ্চলে। আসলে রাজস্থান মানেই তো কেবল রানি পদ্মাবতীর মহিমার কাহিনি নয়। নারীর প্রতি এই রাজ্যের সামগ্রিক মনোভাবের ছবিটা দেখলে দেখা যাবে, সেখানে রয়েছে কন্যাভ্রূণ হত্যা আর নারীকে অবাঞ্ছিত মনে করার দীর্ঘ ইতিহাস। আর তার জেরেই এখানে পুরুষ আর নারীর সংখ্যার অনুপাত বিচার করলে বিস্মিত হতে হয়। পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা এতটাই কম যে সব পুরুষের সহজে বিয়ে করার জন্য পাত্রী জোটে না। আর সেই কারণেই উৎপত্তি হয়েছিল ওই ‘আতা সাতা’ প্রথার। এর ফলে কোনও পরিবার তখনই তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে সম্মত হয়, যখন অন্য পরিবারটি থেকেও একটি মেয়েকে তাদের পরিবারে বিয়ে দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: ‘গেরুয়ার অপমান’! মিনি স্কার্টে স্মৃতি ইরানি, রং সেই গেরুয়া দেখেই ফের খোঁচা নেটিজেনদের
সম্প্রতি এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে এসেছে এই কুপ্রথার কথা। এই প্রথার শিকার হয়েই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছিল ওই তরুণী। নিজের সুইসাইড নোটে এই প্রথা বন্ধ করার আরজিও জানিয়ে গিয়েছে সে। আর সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এ দেশে মেয়েদের সামগ্রিক অবস্থানের মানচিত্রটি।