মসজিদ ভেঙে সেই জমিতে বানানো হবে মন্দির। এই হুঙ্কার দিয়েই তিন দশক আগে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অযোধ্যার বাবরি মসজিদ। সেই বিরাট ঘটনার পর কেমন মনোভাব ছিল মন্ত্রিসভার? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও-ই বা ঠিক কী বলেছিলেন এ নিয়ে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তিন দশক আগেই ভারতের রাজনীতিকে সম্পূর্ণ নাড়িয়ে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা। এখনও পর্যন্ত, রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্র বোধহয় এই মসজিদই। যদিও এর আগেই শীর্ষ আদালতের তরফে মসজিদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং বাবরি ধ্বংসের পর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তৎকালীন সরকারকে। সেই সময়ে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও-এর? সম্প্রতি সে কথাই উঠে এল বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের বক্তব্যে।
আরও শুনুন: বাবরি ধ্বংসে ছিল বড় ভূমিকা, সেই কল্যাণের মৃত্যুদিনেই ‘হিন্দু গৌরব দিবস’ পালনের ডাক বিজেপির
‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যা: নেশনহুড ইন আওয়ার টাইমস’ বইয়ে খুরশিদ লিখেছেন, বাবরি ধ্বংসের পরদিন যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে এই পরিস্থিতির জন্য কার্যত সমবেদনা জানাচ্ছিলেন দলীয় মন্ত্রীরা। আসলে এমন একটি বড় ঘটনা কেন্দ্র সরকারকে রীতিমতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল। কে কী বলবেন, কোনও কিছুই সেদিন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেখানে প্রথম বরফ গলানোর চেষ্টা করেন মাধবরাও সিন্ধিয়া। তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে সমবেদনা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আদৌ স্বস্তি পাননি পি ভি নরসিমা রাও। উলটে তিনি প্রায় বিরক্তির সুরেই বলেন, তাঁকে সহানুভূতি না জানাতে। খুরশিদ লিখেছেন, রাও-এর এহেন কড়া মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে এগোনো সম্ভব হয়নি আর কারও পক্ষেই। সেদিনের মতো বৈঠকের ইতি ঘটে ওখানেই।
আরও শুনুন: নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষতায় ফেরার দরকার নেই, মত জেএনইউ-এর অধ্যাপিকার
জমির মালিকানা চেয়ে মন্দির ও মসজিদ পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যেই ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকদের হাতে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল বাবরি মসজিদ। ঘটনার দিনই উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে নরসিমা রাও সরকার। সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বংসের ঘটনার তদন্তের জন্য কমিশনও গড়া হয়। তবে বাবরি মসজিদ ধংসের ঘটনা আসলে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও-এর ব্যর্থতা, এই মর্মে অভিযোগ উঠেছিল রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ থেকে। আত্মজীবনী ‘দ্য টারবিউল্যান্ট ইয়ারস’-এ যেমন এই ঘটনার জন্য নরসিমা রাও-এর দিকে আঙুল তুলেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, তেমনই ‘হাও পি ভি নরসিংহ রাও ট্রান্সফর্মড ইন্ডিয়া’ বইয়ে রাও-এর অপ্রকাশিত ডায়েরি, চিঠি ও অন্যান্য নথির ভিত্তিতে সাংবাদিক-গবেষক বিনয় সীতাপতি জানিয়েছিলেন, বাবরি ধ্বংসের পর কীভাবে দলের মধ্যেই গোপনে গোপনে নরসিমা রাও-এর বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। আর সেই সবকিছুরই সূচনা হয়েছিল তিন দশক আগের সেই ভয়াবহ দিনটিতে।