দামাল হাতি। সামনে পড়লে রক্ষা নেই। প্রাণ নিয়ে ফেরা হবে না। কিন্তু বিপর্যয়ের মাঝে সেই দামাল হাতিই বন্ধু হয়ে উঠল। মৃত্যুপুরী ওয়ানড় থেকে জীবিত ফিরে সেই অভিজ্ঞতাই শোনালেন কেরলের বাসিন্দা। ঠিক কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একের পর এক বাড়ি ধসে যাচ্ছে। রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। চেনা পরিচিত সকলেই ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে। কজন জীবিত রয়েছেন, কেউ জানে না। ওয়ানড়ের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেই আটকে পড়েন কেরলের সুজাতা। তিনি অবশ্য প্রাণ নিয়ে ফিরেছেন। কিন্তু সাক্ষী থেকেছেন ভয়ানক ঘটনার। বিধ্বংসী বন্যা তো রয়েছেই, তার সঙ্গে দামাল হাতির সামনেও পড়েছিলেন সুজাতা। প্রাণ নিয়ে ফিরে সেই অভিজ্ঞতাই শোনালেন তিনি।
:আরও শুনুন:
বড্ড বেশি মানুষ গেল বানের জলে ভেসে! প্রকৃতির পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে ওয়ানড়?
প্রকৃতির রুদ্ররোষে কেরলের মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ওয়ানড়। বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে অনেককেই। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জঙ্গলঘেরা গোটা চারেক গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানেই ছিল সুজাতা আনিনাচিরার (Sujatha Aninanchira) বাড়ি। যা জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। বিপদ বুঝে আগেভাগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সুজাতা ও তাঁর পরিবার। চারিদিকে শুধুই জল। কোনওক্রমে তাঁরা পাহাড়ের কাছে পৌঁছন। একটু উঁচুতে উঠতে পারলে জলের ভয় খানিক কমবে। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টিতে পাহাড়ে ওঠা সহজ ছিল না। এদিকে যে অংশে তাঁরা আটকে পড়েন সেখানে উদ্ধারকারী দল তখনও পৌঁছতে পারেনি। বাধ্য হয়েই প্রাণ হাতে করে পাহাড়ে উঠতে শুরু করেন সুজাতারা। এমনিতে এই অঞ্চল জঙ্গলে ঘেরা। সেখানে আর কোনও জন্তু না থাক, হাতি থাকবেই। আর এই হাতি যে কোনও মুহূর্তে মত্ত হয়ে উঠতে পারে সেকথা ভালমতো জানতেন সুজাতারা। কিন্তু পিছনে ফেরার উপায় নেই। যতই বিপদ হোক, জঙ্গলেই রাত কাটাতে হবে তাঁদের। সঙ্গে কোনও অস্ত্র বা আগুনও নেই, যাতে হাতির মুখোমুখি হলে কোনওভাবে আত্মরক্ষা করা যায়। এভাবে বেশ কিছুটা গভীরে ঢুকতে আলো কমতে শুরু করে।
:আরও শুনুন:
বন্যায় ভেসেছে আপনজন, ওয়ানড়ে মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্বে মন্দির-মসজিদ-গীর্জা কর্তৃপক্ষ
কথায় আছে, যেখানে সন্ধ্যা হয়, সেখানেই বাঘের ভয়! এখানেই অবশ্য বাঘ নয়, হাতির ভয় ছিল। আর বিকেল হতেই সুজাতারা বুঝতে পারেন তাঁদের সামনে একদল দামাল হাতি রয়েছে। তখনও যেটুকু আলো রয়েছে তাতে স্পষ্টভাবে হাতির দল দেখতে পাচ্ছিলেন সুজাতা। এরপরের ঘটনা তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। তাঁর কথায়, যে দামাল হাতিকে সবাই ভয় পায়, বিপর্যয়ের মাঝে সেই হাতিও যেন ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছে। চারিদিকে এত মৃত্যু, প্রকৃতির তাণ্ডব দেখে হাতির দলও রীতিমতো ভয় পেয়েছে। তাই সেদিন রাতে সুজাতা ও তাঁর পরিবারের ক্ষতি করার বদলে, বন্ধু হয়েই আগলে রাখে ওই হাতির দল। জঙ্গলের মাঝে জনা দশেক মানুষ, তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়ে বিশাল বপু হাতির দল। কেউ কারও দিকে এগোচ্ছে না। দু পক্ষই জানে, বিপদের দিনে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। দেখতে দেখতে রাত কাটে। সকালে উদ্ধারকারীর দল পৌঁছয় ওই এলাকায়। তখনও হাতির দল ঠায় দাঁড়িয়ে। যতক্ষণ না সবাই উদ্ধারকারীদের সঙ্গে চলে যাচ্ছেন, ততক্ষণ তাকিয়ে ছিল হাতিরা, ওয়ানড় থেকে জীবিত ফিরে এমনই দাবি সুজাতার। তাঁর দাবি, হাতির দল এমন বন্ধু হয়ে পাশে ছিল বলেই এ যাত্রায় প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছেন তাঁরা। সারাজীবন ওই হাতির দলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন, এমনটাই দাবি সুজাতার। ওয়ানড়ে অবশ্য প্রকৃতির তান্ডব থামেনি। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। একইসঙ্গে চলছে বন্যপ্রাণী উদ্ধারের চেষ্টাও। বিশেষ করে, আটকে পড়া হাতি উদ্ধারে তৎপর হচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।