ঠিকানা না থাকলে চিঠি হারিয়ে যায়। কিন্তু ঠিকানা থাকলেও যে চিঠি হারিয়ে যেতে পারে, সে কথা জেনেছে ওয়ানড়। কারণ ঠিকানা তো আছে, কিন্তু প্রাপক কোথায়!
মৃত্যুর আগে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এক কবি। কিন্তু সে মৃত্যু ছিল তাঁর স্বেচ্ছানির্বাচন, তাঁর জেনে যাওয়া আগামী দিন। আসলে তো মৃত্যু আসে আকস্মিক, কোনও জানান না দিয়ে। সেখানে তাই ঠিকানাও বদলানো হয় না আগেভাগে। যেমনটা করতে পারেননি ভয়াবহ ধসে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ওয়ানড়ের মানুষেরা। তাঁরা তো জানতেন না প্রকৃতির রোষে নিমেষে হারিয়ে যাবে তাঁদের ঠিকানা। তাই মৃত্যুপুরী ওয়ানড়ে এখন ঠিকানা গায়ে লিখেও নিরুদ্দেশের পথে চিঠিরা। তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পথে পথে ঘুরছেন ডাকহরকরা। চিঠির গায়ে যতই ঠিকানা লেখা থাকুক, বাস্তবে কোথাও সে ঠিকানা ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, কোথাও বা তার খানিকটা টিকে থাকলেও মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার।
:আরও শুনুন:
বিপদে বন্ধু হয়ে রক্ষা করেছে দামাল হাতি, মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে বললেন ওয়ানড়ের বাসিন্দা
প্রকৃতির রুদ্ররোষে বিপর্যস্ত ঈশ্বরের নিজের রাজ্য কেরল। ভয়াবহ ভূমিধসে হারিয়ে গিয়েছে তিনশোর বেশি প্রাণ। মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে গিয়েছে একাধিক জনপদ। বিশেষ করে ওয়ানড়ের মুন্ডাক্কাই, চূরালমালা, আট্টামালা এবং নুলপুঝা নামে চারটি গ্রামের আর কোনও অস্তিত্ব নেই, বলছেন স্থানীয়রা। ধসের দরুন তছনছ হয়ে গিয়েছে ভেলারিমালা নামের আরও একটি গ্রাম। যে কজন প্রাণে বেঁচেছেন, ভিটেমাটি খুইয়ে তাঁদের ঠিকানা এখন ত্রাণ শিবির। ফলে ঠিকানা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাকহরকরা, জানাচ্ছেন পোস্ট অফিসের কর্মী পিটি ভেলায়ুধান। ঠিকানা খুঁজে পেলেও কার হাতে সেই চিঠি তুলে দেবেন, সেই লোকই খুঁজে পাচ্ছেন না।
:আরও শুনুন:
বড্ড বেশি মানুষ গেল বানের জলে ভেসে! প্রকৃতির পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে ওয়ানড়?
ওয়ানড়ের মুন্ডাক্কাই পোস্ট অফিসের কর্মী ভেলায়ুধান। গত ৩৩ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি চিঠি বিলি করাই তাঁর কাজ। চূরালমালাতে তাঁর বাড়িও অবশ্য গিলে নিয়েছে ধস। কোনোক্রমে আত্মীয়ের বাড়িতে মাথা গুঁজেছেন। কিন্তু কাজ তো থেমে থাকে না। তার উপরে এই দুর্যোগের সময়ে চিঠির মতো যোগাযোগ মাধ্যম থমকে গেলে তো সমূহ সমস্যা। সে কথা মাথায় রেখেই ফের কাজে নেমে পড়েছেন ওই ব্যক্তি। ঠিকানার খোঁজে মুন্ডাক্কাই থেকে চূড়ালমালা হয়ে ভেলারিমালায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু যে বাড়িগুলিতে এত দিন ধরে চিঠি পৌঁছে দিতেন, গত ২ অগস্টের পর থেকে সেগুলির বেশির ভাগেরই অস্তিত্বই মুছে গিয়েছে ধসে চাপা পড়ে। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়ছেন না একনিষ্ঠ কর্মী। তাঁর কাছে যেসব চিঠি জমা রয়েছে, সেগুলির প্রাপকদের খুঁজে পেতে ত্রাণশিবিরে গিয়েও খোঁজখবর চালাতে চান তিনি। শিবিরের আশ্রিতদের কাছে ফোন নেই, ফলে যোগাযোগের অন্য উপায়ও বন্ধ। এই অবস্থায় যেন তেন প্রকারে তাঁদের হাতে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন ডাকবিভাগের ওই কর্মী। বিপর্যয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে এভাবেই তিনি বাড়িয়ে দিতে চান সাহায্যের হাত।