আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ছোড়ে পুলিশ। এই অস্ত্র আসলে কী? কবে থেকেই বা এর ব্যবহার শুরু? শুনে নেওয়া যাক।
জলের নাম জীবন, আবার সেই জলই নাকি হয়ে উঠতে পারে বড় হাতিয়ার। আর সেই হাতিয়ার ব্যবহার করতে ভালোমতোই পারদর্শী পুলিশ প্রশাসন। লাঠি-গুলির বদলে স্রেফ জল ছুড়েই যে আন্দোলন মোকাবিলা করা যায়, হাতেকলমে তা বুঝে নিয়েছে তারা। আসলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে যখনই বড় আকারে রাস্তায় নামে জনতা, যখনই প্রশাসনের গায়ে আঁচ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই সেই মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিতে তৎপর হয় প্রশাসন। আর সেই কাজে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় জলকামানকে। দিল্লির কৃষক আন্দোলন থেকে নানা রাজনৈতিক আন্দোলনে, বারেবারেই এর ব্যবহার দেখা গিয়েছে।
আরও শুনুন:
আর জি কর কাণ্ডে পলিগ্রাফ টেস্টের মুখে সন্দীপ-সঞ্জয়, তবে এই পরীক্ষাতেও কি মিথ্যে বলা সম্ভব?
ইতিহাস বলে, সাম্প্রতিক কালে নয়, বহুদিন আগে থেকেই জলকামানের ব্যবহার চালু। ১৯৩০ সাল নাগাদ জার্মানিতে বিরোধী ভিড় ঠেকাতে এটি ব্যবহার করা হত। ষাটের দশকে আমেরিকায় সিভিল রাইটস প্রোটেস্টের সময় পুলিশের তরফে ব্যাপক হারে জলকামান ব্যবহৃত হয়। আর এখন তো সব জায়গায় পুলিশের কাছে নির্ভরযোগ্য অস্ত্র এটি। বিশেষ করে যেখানে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার রক্ষণশীল, সেখানেই প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্রের বেশি ব্যবহার চায় প্রশাসন। জলকামান সেখানে কার্যকরী হাতিয়ার। আসলে তীব্র বেগে জল ছোড়া হয় এই অস্ত্রের মাধ্যমে। সুবিধা থাকলে কোনও জলাশয় থেকে জল সরবরাহ করা হয়, অথবা চলমান ট্রাকের মধ্যেই রাখা থাকে জলভাণ্ডার। জলকামানের গাড়িতে দুটি ইঞ্জিন থাকে। একটি ইঞ্জিন দিয়ে গাড়ি চালানো হয়, জলের পাম্প চালাতে ব্যবহৃত হয় অন্যটি। পাম্প যত শক্তিশালী হয়, হোসপাইপ দিয়ে নির্গত জলের তোড় হয় তত বেশি। আধুনিক জলকামান প্রতি সেকেন্ডে কুড়ি লিটার জল ছোড়ে। ৬৭ মিটার দূর পর্যন্ত জল ছুড়তে পারে এই কামানগুলি। আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে আহত করতে চাইলে এই জলের মধ্যেই নানারকম রাসায়নিক মিশিয়ে দেওয়া হয়। অথবা রং মেশানো জল ছোড়া হয়, যাতে আন্দোলনকারীদের সহজেই চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা যায়।
আরও শুনুন:
ধর্ষণে অভিযুক্তরা যদি ভোটে দাঁড়ান, বিচারের দাবি যাবে কোথায়?
আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়লে রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। লাগাতার আন্দোলন শাসকের অস্বস্তি বাড়ায়। বিশেষ করে শাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে অভিযানে অশান্তির আশঙ্কাও থাকে। সব মিলিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে যত সচেতনতা বেড়েছে, তত পুলিশকেও গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হয়েছে। অভিযানে সরাসরি লাঠিচার্জ করলে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়লেও সমালোচনা হবে। গোলাগুলি তো অনেক পরের কথা। জল সেখানে নিরাপদ অস্ত্র। সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে বিক্ষোভ-আন্দোলন ঠেকাতে সব রাজ্যের পুলিশই এখন জলকামান ব্যবহার করে। এর জন্য ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ বা আদর্শ ব্যবহার বিধিও তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।