যুদ্ধ কেন হয়? এর কোনও ঠিকঠাক উত্তর আজ পর্যন্ত কেউই দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু রণনির্ঘোষে পৃথিবী কেঁপে উঠেছে বারবার। কখনও সে যুদ্ধের কারণ হয়েছে প্রতিশোধ নেওয়ার অদম্য জেদ, কখনও নিছক দখলদারি, কখনও কোনও ধর্মীয় কারণ। আবার কখনও এমন কোনও তুচ্ছ কারণে ভয়ংকর যুদ্ধ বেধে গিয়েছে, যাকে প্রায় ছেলেমানুষি বলা যেতে পারে। একসময় তেমনই এক যুদ্ধ বেধেছিল দুটি দেশ, বুলগেরিয়া ও গ্রিসের মধ্যে।
এককালে বুলগেরিয়া ও গ্রিস দুটি দেশই অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। কিন্তু দুই দেশই যখন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হল, প্রথম বিবাদ বাধল সীমানা নিয়ে। ম্যাসিডোনিয়া ও পশ্চিম থ্রেসের অধিকার দাবি করেছিল দুই দেশই। দুই দেশের মধ্যে গেরিলা কায়দায় ছোট ছোট সংঘর্ষ লেগেই থাকত, আর সেখান থেকেই দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধের শুরু। যুদ্ধে হেরে যায় বুলগেরিয়া। আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও দুই দেশ বিরুদ্ধ পক্ষে যোগ দেয়। মিত্রশক্তির পক্ষে থাকা গ্রিস যুদ্ধ শেষে পুরস্কার হিসেবে পায় পশ্চিম থ্রেসের এক বিশাল অংশ। সব মিলিয়ে গ্রিসের উপরে বুলগেরিয়া হাড়ে হাড়ে চটে গিয়েছিল। যুদ্ধ লাগা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। আর বারুদের স্তূপে সেই আগুনের ফুলকিটুকুই ছুঁইয়ে দিয়েছিল একটি সামান্য ঘটনা।
আরও শুনুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়, এই সারমেয়টির বয়স কত হল জানেন?
সেটা ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর। গ্রেকো-বুলগেরিয়ান সীমান্তে কুকুর নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন একজন গ্রিক সীমান্তরক্ষী। হঠাৎ তাঁর হাত ছাড়িয়ে কুকুরটি ছুট লাগায় বুলগেরিয়ান সীমান্তের দিকে। কুকুরের পিছু পিছু দৌড়তে থাকেন সেই রক্ষীও। বেখেয়ালে সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ঢুকে পড়েন বুলগেরিয়ার ভিতরে। সঙ্গে সঙ্গে সেদেশের সীমান্তরক্ষীদের তরফ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে। মৃত্যু ঘটে তাঁর। সহকর্মীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পালটা আক্রমণ করে গ্রিসের বাকি সীমান্তপ্রহরী সেনারা। যদিও একজন গ্রিক ক্যাপ্টেন ও আরেক সেনা সাদা পতাকা হাতে নো ম্যান্স ল্যান্ডে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বুলগেরিয়ার সৈন্যরা তাঁদেরও হত্যা করে। এরপরও গ্রিসের দাবি মেনে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি বুলগেরিয়া। সুতরাং ২২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। গ্রিক সেনাবাহিনী বুলগেরিয়ার সীমান্তবর্তী পেট্রিচ শহর ও তার আশেপাশের এলাকা দখল করে আরও সামনে এগোতে থাকে। বুলগেরিয়ার প্রায় শ-খানেক অধিবাসীর প্রাণহানি ঘটে, ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি ধ্বংসের মতো ক্ষয়ক্ষতি তো ছিলই। অবশেষে লিগ অফ নেশনসের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছিল এই যুদ্ধ। আর এই গোটা যুদ্ধটা শুরু হওয়ার তাৎক্ষণিক কারণ ছিল একটি সামান্য কুকুর।