বিরহ সহ্য করতে না পেরে প্রিয়ার কাছে মেঘদূত পাঠিয়েছিলেন যক্ষ। তা আজকালকার দিনে চাইলেও কি আর তেমন দূত পাওয়া যায় নাকি! তাই স্ত্রীর বিরহ সহ্য করতে না পেরে সাইক্লোনের মরসুমে নিজেই নেমে পড়েছিলেন সমুদ্রে। তা-ও আবার একটা মাছ ধরার নৌকো নিয়ে। তাঁর গল্প হার মানাবে বলিউডি ছবিকেও। ওই নৌকো নিয়ে সমুদ্রপথে প্রায় ১৩০০ মাইল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ভিয়েতনামের এক ব্যক্তি। ধন্যি প্রেম বটে! কিন্তু তারপর! তার পর কী হল সেই প্রেমিকটির। শুনে নিন সেই গল্পই।
স্ত্রী কাজ করেন মুম্বইতে। অতিমারির প্রকোপে ভ্রমণে এতদিন ধরে জারি ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। যার জেরে টানা দু বছর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত হয় নি তাঁর। আর সেই বিরহ সহ্য করতে পারছিলেন না এই ব্যক্তি। তাই রওনা দেন নিজেই।
তিনি নিজে থাকেন ভিয়েতনামে। কোনও মতে টাকা পয়সা জোগার করে সেখান থেকে থাইল্যান্ড অবধি পৌঁছতে পেরেছিলেন বটে। তবে ভারতে পৌঁছনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি তিনি। তাই উপায় না দেখে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন সমুদ্রে। কথায় বলে ‘ইয়ে ইশ্ক নহি আসান! আগ কা দরিয়া, তয়ের কে যানা হ্যায়’। তা প্রেমে পড়লে মানুষ কী না করে! এ তো সামান্য সমুদ্র, তাও আবার আগুনের নয়। তাই সাত পাঁচ না ভেবে বেরিয়েই পড়েছিলেন হুয়াং হুন নামে ৩৭ বছরের ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: সম্পর্ক ভেঙেছে তাতে কী! ট্যুর প্যাকেজের লোকসান এড়াতে একসঙ্গেই ভ্রমণে যুগল
একটা স্যুটকেস ভর্তি করে বেশ কিছুটা ইনস্ট্যান্ট নুডল আর কয়েক বোতল পানীয় জল। ব্যাস শুধু এই দুটো জিনিস সঙ্গী করেই একদিন ফুকেতের হলিডে আইল্যান্ড থেকে উঠে বসেছিলেন একটা মাছ ধরা ডিঙিতে। ওই হাওয়া ভরা ছোট ছোট লাইফবোট গুলি যেমন হয়, তেমনই একটি নৌকো আর কি। আর সেই নৌকো করে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন প্রায় ১৩০০ মাইল। না সঙ্গে ছিল কোনও কম্পাস, না ম্যাপ, না কোনও জিপিএস সিস্টেম। এমনকি অতিরিক্ত জামাকাপড়টুকুও ছিল না তাঁর কাছে। সেভাবেই অন্তত ১৮ দিন মাঝসমুদ্রে কাটিয়েছেন হুয়াং।
অন্য কোনও ভাবে যে এ দেশে আসবেন, তার উপায়ও নেই। কী করবেন! ভিসাই তো নেই তাঁর কাছে। ভিসা ছাড়া স্ত্রীর কাছে পৌঁছতে এর থেকে ভাল উপায় মাথায় আসেনি হুয়াং হুন নামে ৩৭ বছরের ওই ব্যক্তির।
আরও শুনুন: দশ বছর প্রেমিকাকে লুকিয়ে রাখলেন যুবক, অবশেষে মিলল চার হাত
এত সব কিছু করলেন বটে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। থাই মেনল্যান্ড থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে সিমিলিয়ান দ্বীপের কাছে হুয়াংয়ের নৌকোটি দেখতে পান নৌ-নিরাপত্তা রক্ষীরা। তাঁরাই উদ্ধার করেন হুয়াংকে। আর উদ্ধারের পর গ্রেপ্তারও করা হয় তাঁকে। জানা গিয়েছে, বিমান ধরে ব্যাঙ্কক পর্যন্ত আসেন ওই ব্যাক্তি। সেখান থেকে বাস ধরে পৌঁছন ফুকেতে। ভিসা ছাড়া ভারতে পৌঁছনো সম্ভব নয় জেনেই সমুদ্রপথে আসার সিদ্ধান্ত নেন হুয়াং। ধরা পড়ার পরে কাঁচুমাচু মুখে হুয়াং জানিয়েছেন, স্ত্রীর বিরহেই এই কাজ করেছেন তিনি। আপাতত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ফুকেতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম দূতাবাসের পাশাপাশি ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে থাইল্যান্ড প্রশাসনের তরফে। তবেকোনও তরফ থেকেই উত্তর আসেনি এখনও।
বিরহজর্জরিত যক্ষ প্রিয়ার কাছে পাঠিয়েছিলেন মেঘকে। আর স্ত্রীর বিরহে যেভাবে নিজেই সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভিয়েতনামের এই প্রেমিক-স্বামীটি, তা বোধহয় কোনও বলিউডের কোনও সিনেমার থেকে কম যায় না কোনও অংশেই।