চুম্বন করতেই হবে, চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন সহকর্মী। আর চ্যালেঞ্জ মানতে না পেরে ইন্টার্নশিপই ছেড়ে দিলেন তরুণী। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একসঙ্গে কাজ করার জন্য দলগত মানসিকতা গড়ে তোলা জরুরি। আর সেই গড়ে তোলার প্রক্রিয়া হিসেবেই সহকর্মীর নির্দেশ ছিল, তাঁকে চুম্বন করতে হবে। একজন মহিলা কর্মীকে কোনও বয়স্ক পুরুষ সহকর্মী খেলার ছলে এ কথা বলছেন, এই বিষয়টিই রীতিমতো অস্বস্তিকর ছিল নির্দেশ পাওয়া তরুণীর কাছে। কর্মক্ষেত্রে এহেন ঘটনাকে একরকম হেনস্তা বলেই মনে হয় তাঁর। সেই অস্বস্তির জেরে শেষ পর্যন্ত কাজই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন:
কলকাতার ঘটনায় সতর্ক কোচি, মহিলা কর্মীদের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ খোদ হাসপাতালেই
ওই তরুণী জানিয়েছেন, ভিয়েতনামের এক সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। অফিস থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সমুদ্রতীরে এক ভ্রমণে যেতে হবে সকলকে। এমনিতে দলগত কাজের মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য কর্পোরেট দুনিয়ায় এমন নানা পদক্ষেপ করা হয়ে থাকে। কখনও ঘুরতে যাওয়া, কখনও একসঙ্গে কোনও খেলাধুলো করা কি পার্টির আয়োজন, এমন নানা কিছুই হয় সেখানে। ফলে ওই ভ্রমণে কারোরই কোনও আপত্তি ছিল না। তা ছাড়া না গেলে অফিস কর্তৃপক্ষের তরফে শাস্তির ভয়ও দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ আধিকারিকদের একাধিক আচরণই বেশ সমস্যাজনক। তরুণী জানিয়েছেন, প্রায় তাঁর বাবার বয়সি এক সহকর্মী তাঁকে বলেন, একবার তিন গ্লাস মদ্যপান করতে হবে, নইলে চুম্বন করতে হবে তাঁকে। মুখের কথাই নয়, ক্রমাগত নিজের মুখ তাঁর মুখের কাছে এগিয়ে আনছিলেন পুরুষটি, অস্বস্তি নিয়েই মনে করেছেন ওই তরুণী। অপর এক পুরুষ আবার তরুণীর হাত ধরে রেখে কার্যত জোর করেই মদ্যপানে বাধ্য করেন তাঁকে। শুধু তিনি একাই নন, তরুণী দেখেছিলেন, অন্যান্য নারীদের প্রতিও তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের আচরণ আদৌ প্রফেশনাল নয়। কোনও মহিলা হয়তো এমনিই বসে রয়েছেন, তাঁকে জোর করে সমুদ্রে ঠেলে দিচ্ছেন কোনও পুরুষ। এইভাবে স্পর্শ করাকে অস্বস্তিকর বলেই মনে হয়েছিল ওই তরুণীর। কারও সঙ্গে কারও সম্পর্ক গড়ে উঠলে তা আলাদা কথা, অন্যথায় এহেন আচরণ ব্যক্তিগত সম্মতির প্রশ্নটিকেই নাকচ করে বলে মনে হয়েছে তাঁর।
আরও শুনুন:
ধর্ষণ-প্রতিরোধী আইনে জোর! নির্ভয়া কাণ্ডেও বদলায় আইন, সমাজের মন বদলেছে কি?
কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার ঘটনা আদৌ নতুন নয়। কর্মক্ষেত্রে দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটে, যেখানে জীবনের অনেকটা অংশ জমা পড়ে যায়, তা একরকমের ঘরই হয়ে ওঠার কথা ছিল। অথচ সকলেই জানেন, কর্মক্ষেত্রকে যতই প্রফেশনালের গণ্ডিতে বাঁধা হোক না কেন, সেখানেও হেনস্তার অবিরাম আনাগোনা। কাজের জগতেও ব্যক্তিগত পরিসরে হাত পড়ে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পর্যন্ত বিঘ্নিত হয়। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন, লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশন এবং গ্যালাপ-এর এক সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার। তা কখনও যৌন হেনস্তা, কখনও মানসিক বা অন্য ধরনের আক্রমণ। তেমনই হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে, জানিয়েছেন ভিয়েতনামের ওই তরুণী।