মধ্যপ্রদেশে যেভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা, তাতে ঝড় উঠেছে দেশে। একই ছবি ওড়িশাতেও। সেখানে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর বেঁধে রাখা হয়েছিল শিকলে। পরপর প্রকাশ্যে আসা ঘটনাগুলি স্পষ্টতই ইঙ্গিত করছে ঠিক কোন অবস্থায় আছে সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যেই আছে অতিমারীর ছোবল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যে খুব ভাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে না, এবার সেই কথাই বললেন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং লেখক পি সাইনাথ।
অতিমারীর সময় সংবাদমাধ্যমকে জরুরি পরিষেবা হিসাবেই গণ্য করা হয়েছিল। অথচ সেই অতিমারীকালেই চাকরি গিয়েছে অন্তত ২০০০ সাংবাদিকের। এ ছাড়া প্রায় ১০ হাজার সংবাদমাধ্যমের কর্মী খুইয়েছেন চাকরি। সম্প্রতি এই তথ্য সামনে আনলেন বিশিষ্ট লেখক তথা ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক পি সাইনাথ। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সংকট নিয়ে টুইটারে নিজের মতামত জানিয়েছেন তিনি। সেখানেই তিনি তুলে ধরেছেন এই বাস্তবচিত্র।
আরও শুনুন: সম্প্রতি চর্চায় SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ড, জানেন কে এই উডবার্ন সাহেব?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের শতাব্দীপ্রাচীন ধারাটিকে খতিয়ে দেখতে গিয়ে তিনি পৌঁছেছেন রাজা রামমোহন রায়ের দরবারে। স্মরণ করেছেন তাঁর মিরাত-উল আকবরের কথা। যেখানে অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কলমে আগুন ঝরিয়েছিলেন রামমোহন। এই কাগজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮২ সালের ১২ এপ্রিল। সেই হিসাবে বর্তমানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ঋজু ধারা তার ২০০ বছরে পা রেখেছে। এই মুহূর্তে সংবাদমাধ্যম ঠিক কেমন আছে, তাই-ই খতিয়ে দেখতে গিয়ে সাইনাথ তুলে এনেছেন একটি ঘটনা। কুমিল্লার প্রতাপ নারায়ণ দাসের মৃত্যুর প্রতিবাদ করে জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লিখেছিলেন নবজাগরণের প্রাণপুরুষ রামমোহন। প্রত্যাশিত ভাবেই তারপর ব্রিটিশরাজ কণ্ঠরোধ করেছিল সংবাদমাধ্যমের। এই তথ্য তুলে ধরে সাইনাথের প্রশ্ন, এই রকম ঘটনা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও খুব চেনা চেনা লাগছে না কি? অর্থাৎ তাঁর ইঙ্গিত, আজও শাসকের সমালোচনায় তিরস্কারই নেমে আসে। এরপরই তথ্য দিয়ে তিনি জানান, করোনাকালে বহু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কর্মী চাকরি খুইয়েছেন। যদিও সরকার যে সে সবের সুরাহায় খুব সদর্থক কাজ কিছু করেছে তা বলা যায় না। রামমোহনের উদাহরণ বারবার করে তুলে এনেছেন সাইনাথ। তাঁর বক্তব্য, সাহসী সাংবাদিকতার যে-পথ তিনি খুলে দিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে তা অনুসরণ করেছেন খোদ গান্ধী বা আম্বেদকরের মতো বরেণ্য মানুষ। এঁদের কর্মপদ্ধতির দিকে যদি চোখ রাখা যায় তাহলে হয়তো আজকের সংকট বা চাপ মোকাবিলা করার রাস্তা পাওয়া যাবে। বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের আক্ষেপ, বর্তমান পরিস্থিতি একজন সাংবাদিককে নেহাত টাইপিস্টে রূপান্তরিত করেছে। সদর্থক সাংবাদিকতাকে তাই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করতে হচ্ছে এখন।
আরও শুনুন: দ্রুত পৌঁছনোর প্রতিযোগিতা, গ্রাহকের চাহিদাই কি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে ‘ডেলিভারি বয়’দের?
বিশ্ব রাজনীতিতে এখন চর্চায় ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’। সাইনাথ সংবাদমাধ্যমের প্রেক্ষিতেও তুলে এনেছেন এই শব্দটিকে। তাঁর দাবি, ক্যাপিটালিজম বা পুঁজির চরিত্র তো জানা। কিন্তু ক্রোনি বা সহযোগী কারা সেদিকে যদি তাকিয়ে দেখা যায়, তাহলেই আজকের সংবাদমাধ্যমের সংকটের রূপটি স্পষ্ট হবে। এই কথা যখন তিনি জানাচ্ছেন তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে সাংবাদিক হেনস্তার কথা। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও নানা স্তরে হচ্ছে আলোচনা। ঠিক সেই সময়েই যুগপুরুষ রামমোহনকে সামনে রেখেই সময় ও সাংবাদিকতার সংকটটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন বিশিষ্ট এই লেখক-সাংবাদিক।