ট্রেনের বেড়ানো যেমন গল্পের জোগান দেয়, তেমনই ট্রেনের নামেও কিন্তু কম গল্প লুকিয়ে নেই। এ দেশে যত ট্রেন চলে, তাদের নামেরও তত বাহার। আর সেইসব নামকরণের কারণগুলিও অনেকসময় গল্পেরই মতো। শুনে নেওয়া যাক।
ট্রেনের নাম নাকি মহারাজা এক্সপ্রেস! আবার কোনও ট্রেনের নাম কবিতার নামে, কিংবা কবির নামেও। এমনই রকমারি নামের নানা ট্রেন চালু করেছে ভারতীয় রেল। এইসব নাম যেমন অভিনব, তেমনই নামের নেপথ্যে থাকা গল্পগুলিও কম চমকে দেওয়ার মতো নয়।
আরও শুনুন: গড়েছেন মুসলিমরা, পুজোও করেন তাঁরাই, যোগীরাজ্যে রয়েছে এমনও এক শিবমন্দির
মহারাজা এক্সপ্রেসের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। মুম্বই এবং দিল্লি থেকে রাজস্থানের উদ্দেশে এই ট্রেনটি চালু করেছিল ভারতীয় রেল, ২০১০ সালে। যে কোনও যাত্রী এই ট্রেনে উঠলে রাজার মতোই আতিথেয়তা পাবেন। তবে খরচও করতে হবে রাজকীয়। আবার গরিবরথ এক্সপ্রেসের নামকরণেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর খরচ তুলনায় বেশ কম। হাওড়া ও সেকেন্দ্রাবাদের মধ্যে যাতায়াত করা ফলকনামা এক্সপ্রেসে কোনও রাজকীয় আতিথেয়তা মিলবে না বটে, তবে হায়দরাবাদের বিখ্যাত ফলকনামা প্রাসাদের নামেই এর নামকরণ। উর্দু শব্দ ‘ফলকনামা’-র অর্থ আকাশের মতো। ১৮৯৩ সালে ইউরোপের রাজপ্রাসাদগুলির আদলে এই আকাশছোঁয়া বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন নবাব বিকার-উল-উমরা।
আম্রপালি এক্সপ্রেসের সঙ্গেও জুড়ে আছে রাজকীয় প্রসঙ্গ। বিহারের কাটিহার থেকে পঞ্জাবের অমৃতসর পর্যন্ত চলাচল করে এই ট্রেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বৈশালীতে নগরগণিকা ছিলেন আম্রপালি। শোনা যায়, তাঁর প্রেমে ভেসেছিলেন খোদ মুঘল সম্রাট বিম্বিসারও। পরে নগরবধূর জীবন ত্যাগ করে বুদ্ধের শরণ নেন এই অসামান্যা নারী। আজকের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায়, আম্রপালি বিহারেরই ভূমিকন্যা ছিলেন। তাঁর নামানুসারেই এই ট্রেনের নামকরণ। আবার দিল্লির সরাই রোহিল্লা স্টেশন থেকে রাজস্থানের উদয়পুরের মধ্যে যাতায়াত করে চেতক এক্সপ্রেস। নামেই বোঝা যাচ্ছে, রানা প্রতাপের ঘোড়ার নামেই এই ট্রেনের নাম। ১৫৭৬ সালের হলদিঘাটের যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিল চেতক। তারপরেও সে নিজের কর্তব্য থেকে সরেনি। রানাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়ে সেও ঢলে পড়েছিল মৃত্যুর কোলে। তার সেই কাজের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে রাজস্থানগামী এই ট্রেনটিকে।
আরও শুনুন: চলতি বছরে পদ্ম প্রাপকের তালিকায় নাম একাধিক বিদেশির, কারা তাঁরা?
রাজকীয় যাপনের একেবারে উলটো মেরুতে রয়েছে অহিংসা এক্সপ্রেস। আমেদাবাদ থেকে পুনের মধ্যে চলাচল করে এই ট্রেন। আমেদাবাদেই গান্ধীজি তাঁর আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন, আর তাঁর অহিংসা ব্রতের কথা মনে রেখেই এই ট্রেনের এমন নামকরণ। একইভাবে দীক্ষাভূমি এক্সপ্রেসের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এমন এক ব্রতের কথাই। ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর, নাগপুরে কয়েক হাজার অনুগামী-সহ বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন বাবাসাহেব আম্বেদকর। সেই ঘটনাকে মনে রেখেই নাগপুর থেকে গয়াগামী এই ট্রেনের এমন নামকরণ করা হয়।
আজমগড় ও দিল্লির মধ্যে যাতায়াত করে কাইফিয়ত এক্সপ্রেস, যার নামকরণ করা হয়েছে উর্দু ভাষার কবি কাইফি আজমির নামে। কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থের নাম নিয়ে রয়েছে ‘অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস’-ও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর নামেও রয়েছে ট্রেন। এমনভাবেই, কখনও কোনও স্থান বা ঘটনা, কখনও আবার কোনও মনীষী বা তাঁদের কাজকে ট্রেনের নামকরণে জুড়ে রেখেছে ভারতীয় রেল।