ডাকাতির জন্য এখন আর নিজের গাড়ি বা ভাড়া নেওয়া গাড়ি নয়, অ্যাপ ক্যাবের সাহায্য নিল ডাকাত। শুধু তাই নয় ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে তার জন্য অপেক্ষা করতেও বলে গেল সেই ক্যাবচালককে। তারপর কী ঘটল? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মোবাইলের একটা ক্লিকেই এখন বাড়ির সামনে হাজির হয় গাড়ি। আর সেই ক্যাবে চড়েই ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে এলেন জাসোন খ্রিশমাস নামে বছর ৪২ এর এক মার্কিন ব্যক্তি। ব্যাঙ্কের সামনে গাড়ি থেকে নেমে মাস্ক পরে নেন তিনি। ক্যাব চালককে নির্দেশ দেন তাঁর ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। এরপর জাসোন ব্যাঙ্কে গিয়ে বন্দুক তাক করে টাকা লুট করেন। তারপর বেরিয়ে এসে ক্যাবে চড়ে বাড়ি পৌঁছান। ধরা পড়ার পর তাঁর এমন কাণ্ডে রীতিমতো অবাক মার্কিন পুলিশ।
আরও শুনুন: রেস্তোরাঁর বিল ১.৩ কোটি! খাবার খেয়ে মাথায় হাত গ্রাহকের
সাধারণত বিপদে পড়লে বা কোথাও যাওয়ার দরকার হলে ক্যাব বুক করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু জাসোন ক্যাব ভাড়া করেছিলেন ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে যাওয়ার জন্য। নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এতটাই সচেতন ছিলেন তিনি যে ক্যাবচালক একবারের জন্যেও তাঁর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি। বাড়ির সামনে থেকে রওনা হয়ে তাঁকে নিয়ে হান্টিংটন ব্যাঙ্কের সামনে নিয়ে যান চালক। গাড়ি থেকে নামার পর ক্যাব চালককে একপ্রকার জোর করেই অপেক্ষা করতে বলেন তিনি। নির্দেশ মতো গাড়িতেই অপেক্ষা করেন সেই চালকও। তার কিছুক্ষণ পর দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসেন জাসোন। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার জামাকাপড়ে ও ব্যাগে কিছু লাল ছোপ লক্ষ করেছিলেন ওই চালক। ওই রঙ কীভাবে জাসোনের গায়ে লেগেছিল তা জানা যায়নি। তবে যেহেতু তাঁর মুখ ঢাকা ছিল তাই বুদ্ধিকরে কেউ তাঁকে সনাক্ত করার জন্যই তাঁর গায়ে লাল ডাই লাগিয়ে দিয়ে থাকবেন, এমনটা অনুমান করা যেতে পারে। যেটা পরবর্তীকালে জাসোনকে ধরতে সত্যিই সাহায্য করেছিল। সাধারণত সে দেশে নতুন টাকার নোটে ওমন লাল ছাপ দেখা যায়। ক্যাব চালক ওই ছাপ দেখেও, অহেতুক সন্দেহ না করে জাসোনকে আবার তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। তারপর নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে নিজের কাজে চলে যান। কিন্তু ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা কিছুক্ষণের মধ্যেই নজরে আসে পুলিশের।
আরও শুনুন: মৃত প্রিয়জনকে আইনি বিয়ের সম্মতি মেলে এই দেশে, কী নাম এই প্রথার?
তদন্তে নেমে সিসিটিভি ক্যামেরায় জাসোনকে শনাক্ত করে পুলিশ। ঘটনাচক্রে এদিন জাসোনের ব্যাগে লেগে থাকা লাল দাগ নজরে পড়েছিল রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কিছু পুলিশকর্মীরও। তাঁরাই তদন্তকারী পুলিশকে জাসোনের ক্যাবে করে আসা এবং ব্যাঙ্কে ঢোকার বর্ণনা দেন। সেই মতো গাড়ির নম্বর মিলিয়ে খুব সহজেই ক্যাবটির হদিশ পেয়ে যায় পুলিশ। আর সেই ক্যাবের পেছনের সীটেও লাল রঙের ডাই লেগে থাকতে দেখেন তাঁরা। এরপর ক্যাবচালকের সঙ্গেই পুলিশ জাসোনের বাড়িতে হানা দেন। সেখান থেকেই সদ্য লুঠ করা, নতুন টাকার বান্ডিল সহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় জাসোনকে। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগে আদালত তাঁর উপর সাড়ে ৪ কোটি টাকার জরিমানা ধার্য্য করেছে। এক মার্কিন আধিকারিকের মত, ডিসেম্বরের ছুটির মরশুমের আগে কিছু কিছু মানুষ টাকা জোগাড়ের এমন মরিয়া চেষ্টা করে থাকেন। তবে এ ধরণের চমকের জন্য তাঁরা সত্যিই হয়ত প্রস্তুত ছিলেন না।