‘বাবা তারকনাথ’ ছবির সেই বিখ্যাত গানটির কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। – “আজ তোমার পরীক্ষা ভগবান, তুমি পাথর নাকি প্রাণ!” সত্তর দশকের শেষের এই বাংলা ছবিটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দর্শকমহলে। তা মানুষকে তো নিজের কর্মক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত জীবনে রোজই কিছু না কিছু পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ছবির ওই গানের মতো ভগবানকেও পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয় কোনও কোনও সময়। আর তাতে ডাঁহা ফেল করলে কী হয়? মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দির সম্প্রতি সাক্ষী থেকেছে তেমনই একটি ঘটনার। কী হয়েছে সেখানে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভক্তের পরীক্ষা নেন ভগবান, তা তো জানা কথাই। তাই বলে যে ভগবান পরীক্ষার উর্ধ্বে, তেমনটা মানতে নারাজ ছিলেন মধ্যপ্রদেশের এই ব্যক্তি। বরং তিনি তো উল্টে শাস্তিতেও বিশ্বাসী। তাই ভক্তের পরীক্ষায় অসফল হওয়ার ফল ভগবানকে ভুগতে হল হাতে-নাতে।
দিন কয়েক আগে মধ্যপ্রদেশেই সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক দল লোকের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। বুলডোজার এনে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বাসস্থান। তবে এমনটাই বোধহয় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যপ্রদেশে। তাই মনস্কামনা পূরণ না হওয়ায় এ বার খোদ ভগবানের বাসস্থানেই ভাঙচুর চালালেন এক ভক্ত।
আরও শুনুন: মারাত্মক জুয়ার নেশা! কোভিড খাতের সরকারি অর্থ উড়িয়ে গারদে যুবক
মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর জেলার বাসিন্দা বিনোদ কুমার। সাতাশ বছরের বিনোদ পেশায় শ্রমিক। রোজের হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে থাকেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছে তাঁর পরিবার। স্ত্রী ও তাঁর পাঁচ বছরের সন্তানের সুস্থতার কামনায় মন্দিরে একাধিকবার মানতও করেছিলেন বিনোদ। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তার উপর দিন কয়েক আগে মারা যান তাঁর কাকিমা। সব মিলিয়ে বেশ অবসাদেই ভুগছিলেন বিনোদ।
আর সেসবের রাগ গিয়ে পড়েছিল ঈশ্বরের উপরেই। তবে সেই ক্ষোভ যে তিনি এভাবে প্রশমন করবেন, তা বোধহয় ভাবতে পারেননি কেউই।
আরও শুনুন: সস্তায় দাঁতের ডাক্তার দেখাতে ৬ হাজার মাইল পাড়ি! হিসেবি দম্পতির কীর্তিতে অবাক নেটিজেনরা
ছাতারপুর জেলার ওই মন্দিরটিতে কোনও পুরোহিত থাকতেন না। সারাদিনের পুজো সারা হলে ফাঁকাই পড়ে থাকত মন্দির চত্বর। একদিন সকালে উঠে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেন, কে যেন মন্দিরের ভিতরে ঢুকে ভেঙে দিয়ে চলে গিয়েছে তিনটি দেবমূর্তি। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। চলে তদন্তও। মন্দির চত্বরে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
শেষমেশ ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে পুলিশ পাকড়াও করে বিনোদকে। তার কাছ থেকে ভাঙচুরের অস্ত্র দু’টিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেরার মুখে ভাঙচুরের অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছেন বিনোদ। জানিয়েছেন, চার-পাঁচ বছর ধরেই শরীর ভাল যাচ্ছিল না তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের। মন্দিরে বারবার মাথা ঠুকেছেন, তবু কাজের কাজ হয়নি কিছু। তার উপর কাকিমার মৃত্যু, মাথার ঠিক ছিল না বিনোদের। তাই একটি হাতুড়ি আর ছেনি নিয়ে মন্দিরের দেবতামূর্তিগুলির উপর চড়াও হয় সে। বিনোদকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারা তথা ধর্মস্থান অপবিত্র করার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
কথায় বলে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তা ভগবানকে অবিশ্বাস ও তাঁর পরীক্ষা নিতে চাওয়ার ফল যে বিনোদকে গরাদের ভিতরে পৌঁছে দেবে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি ঈশ্বরের এই ক্ষুব্ধ ভক্তটি।