মাটির তলা থেকে নাকি দেবদেবীদের একাধিক প্রাচীন মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এই দাবি করেই সকলের সামনে নিজের পসরা মেলে ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। উলটে এই দাবির কারণে হাজতে যেতে হল তাঁকে। কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মের নামে ব্যবসার প্রথা এদেশে নতুন নয়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের সরল মনের মানুষকে কুসংস্কারের জালে জড়িয়ে প্রায়শই প্রতারিত করেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। দৈবের অছিলায় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কার্যত লুঠ করা হয় তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ। এক্ষেত্রেও ঘটেছে তেমনই এক কাণ্ড।
আরও শুনুন: মরশুমি ফলেই সাজানো দেবতার নৈবেদ্য, প্রসাদেও নিহিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে অশোক নামের এক ব্যক্তি খুলে বসেছিলেন এক দেবছত্র। সামনে কয়েকটি ছোট দেবমূর্তি সাজিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, সেই মূর্তিগুলি নাকি মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা। স্বপ্নাদিষ্ট হয়েই নিজের বাড়ির বাগান থেকে এইসব দেবমূর্তি উদ্ধার করেছেন তিনি। তাই সেইসব মূর্তি ভীষণ ভাবে দৈবগুণ সম্পন্ন। এ কথা ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের মানুষ প্রবল আগ্রহে ভিড় জমান তাঁর ‘দরবারে’। কিন্তু এমনি এমনি সেইসব মূর্তির দর্শন পাওয়া যাবে না। দিতে হবে মোটা টাকা দক্ষিণা। স্বপ্নাদিষ্ট মূর্তির দর্শন পাওয়ার জন্য রীতিমতো দক্ষিণা দিয়েই ওই ব্যক্তির কাছে হাজির হতেন গ্রামবাসীরা। ধীরে ধীরে সেই খবর ছড়িয়েও পড়ে চারদিকে। এই অবস্থায় ওই ব্যক্তি দাবি করেন, ওই দৈবগুণ সম্পন্ন মূর্তিগুলিকে স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মন্দির প্রয়োজন। সেইমতো আরম্ভ হয় চাঁদা সংগ্রহের কাজও। কিন্তু এইসব পরিকল্পনা নিমেষে শেষ হয়ে যায় আসল ঘটনা সামনে আসতেই।
এই ঘটনার কথা জানতে পেরে আসল সত্য সামনে আনার জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন একজন। আর তাঁর সূত্রেই জানা যায়, কিছুদিন আগে এক অনলাইন সংস্থা থেকে কয়েকটি ছোট দেবমূর্তি কিনেছিলেন ওই ব্যক্তি। মাত্র ১৭০ টাকা দিয়ে কেনা সেইসব মূর্তিকেই মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। যে ব্যক্তি তাঁকে মূর্তিগুলি ডেলিভারি করেছিলেন তিনিই জানিয়েছেন এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনাটি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে রীতিমতো সাক্ষ্যপ্রমাণ সহ সব কথা নেটমাধ্যমে ফাঁস করে দেন তিনি। আর এরপরেই খবর যায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছেও। ঘটনার তদন্ত করে পুলিশও একই কথা জানতে পারে। তারপরই ধর্মের নামে প্রতারণা করার অভিযোগে ওই ব্যক্তি এবং তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও শুনুন: পশুর চর্বি থাকায় সাবান ছুঁতেন না দেশবাসী, বিজ্ঞাপনে এগিয়ে এলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ
আসলে দেশের ঝাঁ চকচকে উন্নত দিকটির আড়ালে এখনও রয়ে গিয়েছে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এক অসহায় অংশ। বিশ্বাসের অছিলাতেই সহজে প্রতারিত হয় ওই অংশের মানুষ। আর সেই সত্যিকেই ফের সামনে এনে দিল এই ঘটনা, এমনটাই মত নেটিজেনদের।