তাপপ্রবাহ যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করছে, তা অশনিসংকেত বলা যায়। সামাজিক জায়গা থেকে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সুতরাং বিষ্ণ উষ্ণায়ন আর শুধু আলোচনার বিষয় হয়ে থাকছে না। প্রকৃতি তো বিপর্যস্ত হচ্ছে, নানা মাত্রায় বিপর্যয় নামছে মানুষের ভবিষ্যতেও।
গরমকালে স্কুল ছুটি। এক কালে এ ছিল ভারী আনন্দের বিষয়। হয়তো গরমের ছুটি পড়ুয়াদের কাছে এখনও আনন্দেরই। তবে সেই গরমই যেন পাকাপাকি ছুটির কারণ হয়ে উঠেছে বহু পড়ুয়ার ক্ষেত্রে। ইউনিসেফ-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, গেল ২০২৪-এর গরমের কারণে দেশে অন্তত ৫ কোটি পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। শুধু পরিবেশবিজ্ঞানীরা যে এ নিয়ে চিন্তিত, তাই-ই নয়। রাষ্ট্রনেতারাও এর কুভাপ্রভাব নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় বসছেন। তাঁরা মনে করছেন, এর প্রতিরোধে সামগ্রিক সচেতনতা জরুরি। পরিবেশের প্রভাব যে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে, তাই-ই মুলত উদ্বেগের কারণ। ইউনিসেফের এই সমীক্ষা স্পষ্টতই জানাচ্ছে যে, এই উষ্ণায়ন কীভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও বিপর্যস্ত করছে। ২০২৪ সাল উষ্ণতম বছর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই গরমের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পড়ুয়ারা। রিপোর্ট বলছে, পরিবেশ বদলের নিরিখে ভারত বেশ বিপজ্জনক অবস্থাতেই আছে। সেক্ষেত্রে শিশুরা কতখানি ঝুঁকির মুখে আছে? সেই ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৬৩টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ২৬ নম্বরে। আর সেই সঙ্গেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্তত ৫ কোটি পড়ুয়া।
আরও শুনুন: বিশ্ব উষ্ণায়নে উষ্ণতা হারাচ্ছে সম্পর্ক, ডিভোর্সের পথে হাঁটছে সামুদ্রিক আলবাট্রস-রাও
শুধু ভারত নয়, তাপপ্রবাহের কারণে এই ক্ষতির মুখে পড়েছে গোটা বিশ্বের পড়ুয়ারাই। ৮৫টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে ২৪ কোটির বেশি পড়ুয়াই একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রি-প্রাইমারি থেকে আপার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পুরোটা জুড়েই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষতির বহর অনেকখানি। আরও উদ্বেগের বিষয় যে, এই ২৪ কোটি পড়ুয়ার মধ্যে ৭৪ শতাংশ সেই সব দেশের বাসিন্দা, যে দেশগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকখানি পিছিয়ে। অর্থাৎ উষ্ণায়নের প্রভাব যে অর্থনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তা এই সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট। তাপপ্রবাহ যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করছে, তা অশনিসংকেত বলা যায়। সামাজিক জায়গা থেকে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সুতরাং বিষ্ণ উষ্ণায়ন আর শুধু আলোচনার বিষয় হয়ে থাকছে না। প্রকৃতি তো বিপর্যস্ত হচ্ছে, নানা মাত্রায় বিপর্যয় নামছে মানুষের ভবিষ্যতেও। তা নিয়ে ভাবনা ও সদর্থক পদক্ষেপে যত দেরি হবে, তত মারাত্মক ক্ষতির দিকে এগোবে গোটা পৃথিবীই।