সকালের জলখাবার হোক বা সন্ধের জলখাবার, রোল-চাউমিন নাহলে ঠিক জমে না! এতে ক্ষতি হচ্ছে একথা কমবেশি সকলেই জানেন। তবু স্বাদের কাছে বারবার হেরে যায় স্বাস্থ্য সচেতনতা। সম্প্রতি সেই প্রসঙ্গেই নতুন আশঙ্কার কথা শোনালেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক কী বলছেন আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। ঘরে বসে অর্ডার করলেই চলে আসবে খাবার। তাই মন খারাপ হলেও রোল-চাউমিন, ভাল থাকলেও তাই। স্বাদবদলে মোমো, পিৎজা চলতে পারে। কিন্তু বাড়ির রুটি,মুড়িতে অরুচি অনেকেরই। মুখরোচক খাবার বাড়িতেও বানানো যায়। তাতে ঝক্কি অনেক। কাজেই বাইরের খাবার আপন করে নেওয়াই আজকের দুনিয়ার নয়া অভ্যাস।
আরও শুনুন: বিদেশে নিষিদ্ধ দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা, দেশবাসীর চোখ খুলবে কি?
বড়রা তো বটেই। তালিকায় খুদেরাও রয়েছে। পরিবারের সকলেই একসঙ্গে আনন্দ করে রেস্তরাঁর খাবার খাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে এমন হলেও হয়তো সমস্যা থাকত না। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, প্রায় রোজই বাইরের খাবারে ভরসা রাখছেন অনেকে। বিশেষ করে কাজের চাপে খাবার তৈরির সময়টুকু যাঁদের নেই, তাঁরা বাধ্য হয়েই ভরসার তালিকায় উপরের দিকে রাখছেন রোল-চাউমিন। অনেক সময় খুদের স্কুলের টিফিনেও সেই এক খাবার দেওয়া হচ্ছে। এতে খুদের আনন্দ হচ্ছে যথেষ্টই, কিন্তু ক্ষতিও কিছু কম হচ্ছে না। যে কোনও সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেই, বাইরের খাওয়া কমানোর সাবধান বাণী আসে। তা সে পেট খারাপের হোক বা মাথা ব্যথার। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ভারতীয়ই রোগের শিকার হচ্ছেন স্রেফ অতিরিক্ত বাইরের খাবার খাওয়ার জন্য। তালিকায় ক্যানসারের মতো রোগও রয়েছে।
আরও শুনুন: ৬০ শতাংশ খুদে ভুগছে একটাই অসুখে! সাবধান হতে হবে কোন বিষয়ে?
সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর এক গবেষণায় এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, অস্বাস্থ্যকর খাদাভ্যাসের জেরেই ৫৬.৪ শতাংশ রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রথমের দিকে রেখেছেন ওবেসিটি বা স্থূলতার সমস্যা। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে মহামারীর মতো ছড়াচ্ছে ওবেসিটির সমস্যা সে নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার সেই তালিকায় ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড কিংবা ক্যানসারের নামও যুক্ত হল। বাইরের খাবার মানেই যে অস্বাস্থ্যকর তা নয়। কিন্তু কতটা পরিমাণে তা খাওয়া হচ্ছে সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। যতই ভালো দোকান হোক, রোল-চাউমিনের মতো খাবার রোজ খেলে শরীরে রোগ বাসা বাঁধতে বাধ্য। একইসঙ্গে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে সঠিক পুষ্টির। যার দরুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে। অনেকেই মনে করেন, ডায়াবেটিস কিংবা কোলেস্টেরলের রোগের শিকার কেবল প্রাপ্ত বয়স্করাই হন। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। রিপোর্ট বলছে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যসের জন্য শিশুরাও এইসব রোগের শিকার হচ্ছে। সুতরাং ছোট থেকেই তাদের সঙ্গী হচ্ছে ওষুধ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এইসব খুদে বড় হলে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে আরও। হার্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে অকালে। বাঁচার উপায় নেই বললে ভুল হবে। খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেললেই কাজ হতে পারে ম্যাজিকের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ বাড়ালেই লাভ হতে পারে। ফল, মাছ, শাক-সবজী কিংবা বাড়ির তৈরির খাবারেই যদি সম্পূর্ণ ভরসা রাখা যায় তাহলেই শরীর সুস্থ থাকবে। মাঝেমধ্যে স্বাদবদল হতেই পারে। কিন্তু তার পরিমাণ যেন বেশি না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ রাখতে হবে।