এমন কিছু তথ্য থাকে, যা উপস্থাপনার গুণে মনে থেকে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই তথ্য ঠিক তো? দর্শকের ভরসা, ক্রিয়েটরের গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু ক্রিয়েটরের ভরসা কী? ফ্যাক্ট চেকিং-এর প্রথাগত বিষয় কি তাঁরা মেনে চলেন? সমীক্ষা করে দেখল ইউনেস্কো।
চাঁদের পাহাড় থেকে চিনের প্রাচীর! ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বিষয়বস্তু রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে ঘুরতে এমন অনেক কনটেন্ট সামনে আসে, যার সামনে না থমকে উপায় নেই! চেনা জিনিস বা অল্প জানা জিনিসের ভিতর যে এত বিস্ময় লুকিয়ে থাকতে পারে, তা যেন না দেখলে বিশ্বাসই হয় না। তথ্যের এই অবিরল প্রবাহের মধ্যে অনেক কথাই মনে থাকে না। তবে, এমন কিছু তথ্য থাকে, যা উপস্থাপনার গুণে মনে থেকে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই তথ্য ঠিক তো? দর্শকের ভরসা, ক্রিয়েটরের গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু ক্রিয়েটরের ভরসা কী? ফ্যাক্ট চেকিং-এর প্রথাগত বিষয় কি তাঁরা মেনে চলেন? ইউনেস্কোর সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, প্রতি তিন জন ক্রিয়েটরের দু’জনই এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন না।
নেটদুনিয়ায় যে তথ্য ঘুরে বেড়ায়, তার সত্যতা কতটা যাচাই করা হচ্ছে? তা খোঁজাই ছিল সমীক্ষার উদ্দেশ্য। ডিজিটাল দুনিয়ায় যাঁরা কনটেন্ট ক্রিয়েটর, তাঁরা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন। ফলত, মূলত তাঁদের উপরই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ৪৫টি দেশের, অন্তত ৫০০ ক্রিয়েটরদের বেছে নিয়ে তথ্য-তালাশ করা হয়। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রিয়েটাররা প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে খুব যে গবেষণা করেন, এমনটা নয়। তার মানে এই নয় যে, তাঁরা যে কোনও তথ্যই দর্শকের সামনে তুলে ধরেন। একটি কনটেন্টকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে যথেষ্ট পরিশ্রম করেন তাঁরা। এই কাজে নেটদুনিয়ার উপরই তাঁদের অনেকখানি ভরসা। সেক্ষেত্রে তাঁরা ভরসা করে, তথ্যটি যে ব্যক্তি দিয়েছেন তাঁর গ্রহণযোগ্যতার উপর। অথবা আগে প্রকাশিত তথ্যের লাইক-শেয়ার অনেকাংশে তাঁদের ভরসা দেয়। ধরে নেওয়া হয় যে, অনেক মানুষ যে তথ্যটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন, তা ঠিক। অর্থাৎ কালেকটিভ উইসডমের ভরসা বেশি। কিন্তু সেই তথ্যের উৎস বা তা সম্পর্কে অন্য কোনও মত থাকতে পারে কি-না, তা এই প্রক্রিয়ায় খতিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। ফলত সংখ্যাগরিষ্ঠের মত থাকলেও তথ্যে গরমিল থাকতে পারে। তা যে পাকা, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় না।
এইখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফ্যাক্ট চেকিং। সংবাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি মেনে চলা হয়। ফ্যাক্ট চেকিং-এর জন্য নির্দিষ্ট সংস্থাও আছে। কোনও ছবি বা ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে সত্যতা নিয়ে সংশয় থাকলে তা-ও উল্লেখ করে দিতে হয়। তবে, সংবাদের বাইরে তথ্য পরিবেশনের যে বিপুল আয়োজন, সেখানে এই পদ্ধতিটিই বেশ ঝাপসা। সমীক্ষা বলছে, বহু কনটেন্ট ক্রিয়েটরই জানিয়েছেন যে, কীভাবে এই কাজ করতে হয়, তা তাঁদের অজানা। নেটদুনিয়া যে সব তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তথ্যসূত্রের উল্লেখ থাকে না। যা বিদ্যায়তনিক পরিসরের রীতি, তা এখানে বাধ্যতামূলক নয়। অথচ এই তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই পাকাপাকি ভাবে গেঁথে যাচ্ছে মানুষের মনে। ফলত এখানে ফ্যাক্ট চেকিং দরকারি, যদিও তার পদ্ধতিটি অনেকের কাছেই অজানা। তবে, ৭৩ শতাংশ ক্রিয়েটর জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই পদ্ধতি শিখতে চান। সঠিক তথ্য যাতে সকলের সামনে আসে, সে ব্যাপারেই তাঁরা আগ্রহী। ‘ইউনেস্কো’ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে । চাইলে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা শিখে নিতে পারেন, কীভাবে তথ্যের উৎস অব্দি পৌঁছে যাওয়া হয়।
আর দর্শকের ভূমিকা? ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কথায় অবিশ্বাসের কারণ নেই। তবে, তথ্য সঠিক কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। ফলত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের দায় ও দায়িত্ব খানিকটা তাঁদেরও বটে।