‘ব্লাড ইজ থিকার দ্যান ওয়াটার’- এ কথা তো আমরা শুনেইছি। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের জোর সবসময়ই বেশি। কিন্তু সর্বদা যে এ-কথা প্রযোজ্য তা নয়। বরং বিপদে পাশে থাকার নিরিখে তথাকথিত অনাত্মীয়ও হয়ে ওঠেন পরম আত্মীয়। সম্প্রতি এক যাত্রীকে কিডনি দান করে আত্মীয়তার সেই নমুনাই রাখলেন জনৈক উবর চালক। আসুন শুনে নিই তাঁর কথা।
মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের বিপদে-আপদে দুর্গতিতে মানুষই তো পাশে থাকবে। এ কথা শাশ্বত এবং সুন্দর। কিন্তু বাস্তবে যে সবসময় আমরা মানবিকতার দেখা পাই, তা নয়। বরং এমন এমন ঘটনা ঘটতে থাকে, যাতে মানবিকতা নিয়েই আমাদে ধন্দ বাড়ে। সংশয় বাড়ে। আমাদের চারপাশে প্রতিদিন এমন ঘটনার ঘনঘটা, যেখানে মানবিকতা লাঞ্ছিত হয়। তবে এর বিপরীতে এমন ঘটনাও থাকে, যা দেখে মানবিকতার প্রতি, মানুষের প্রতি বিশ্বাস আবার ফিরে আসে। সম্প্রতি সেরকমই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এল। জানা গেল, এক যাত্রীর শারীরিক দুর্গতির কথা জানতে পেরে খোদ উবর চালকই তাঁকে কিডনি দান করেছেন।
আরও শুনুন: কনের বয়স্ক দাদাকে বিয়েতে বাধ্য বরের বোন! রাজস্থানের অদ্ভুত প্রথার বলি বহু তরুণী
সাধারণত এই ধরনের সফর নিতান্ত কেজো প্রয়োজনের খাতিরেই। যাত্রী আর চালকের মধ্যে বিশেষ যে কথাবার্তা হয়, তা-ও নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে হয়েছিল। ৭২ বছরের এক ভদ্রলোক উঠেছিলেন গাড়িতে। তাঁর সঙ্গেই কথাবার্তা শুরু করেন চালক। কথায় কথায় জানতে পারেন, প্রায় তিরিশ বছর ধরে ডায়াবিটিসে ভুগছেন ওই বৃদ্ধ। তাঁর কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসকরা বলেছেন যে, যত দ্রুত সম্ভব কিডনি প্রতিস্থাপন করা জরুরি। কিন্তু চাই বললেই আর কিডনি পাওয়া যাবে কোথায়! চিকিৎসকরা আরও বলেছেন যে, কিডনিদাতার জন্য বৃদ্ধ যেন দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে না বসে থাকেন। তাতে বিপদ বাড়বে। সব মিলিয়ে নিজের অসাহয়তার কথাই ওই চালককে মন খুলে বলে ফেলেছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: খরচ নেই এক পয়সাও! সাহসে ভর করে সারা দেশ একাই ঘুরছেন তরুণী
আর তা শুনেই নিজের কর্তব্য স্থির করে ফেলেন ওই চালক। যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে জানান, তিনিই কিডনি দান করতে চান। উবর চালক টিম লেটস শুধু মুখের কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। কাজেও তা করে দেখিয়েছেন। আর এ জন্য তিনি একটি পয়সাও নেননি। পরে জানা গিয়েছে, এই ব্যক্তি আসলে প্রাক্তন সেনা। বর্তমানে সপ্তাহান্তে উবর চালক হিসাবে কাজ করেন। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে রক্ষা করার যে শপথ তিনি নিয়েছিলেন, যুদ্ধেক্ষেত্রের বাইরেও সেই শপথ পূরণ করেছেন তিনি। মার্কিন মুলুকের এই প্রাক্তন সেনার গল্পই ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। তাঁর কাজই যেন বলে দিচ্ছে, এই বিদ্ধস্ত বিপর্যস্ত দুনিয়াতে আজও বেঁচে আছে মানবিকতা। আজও মানুষের পাশেই থাকে মানুষ।