আমরা সবাই রাজা! সে যতই বলি না কেন, রাজা তো হন দু-এক জনই। কিন্তু সত্যিই যদি হতে পারতেন রাজা? তাও আবার নতুন একটা দেশের। ভাবছেন নিশ্চয়ই, এমন আবার হয় নাকি! কস্মিনকালেও কেউ শুনেছে নাকি যে দেশ কিনে নিয়েছে কেউ! কিন্তু সত্যিই নতুন দেশের মালিক হয়ে গিয়েছেন এই ব্যক্তি। আর সেই দেশের রাজা শুধু তাঁরাই। কী ভাবে সম্ভব হল এমন আশ্চর্য ঘটনা? শুনে নিন।
এই যে দেশে দেশে এত যুদ্ধ, অসুখ, জিনিসপত্রের এত দাম, এত গিজগিজ করা মানুষের ভিড়- ধরুন আর আপনার ভাল লাগল না। কেমন হত একটা মনের মতো নিজের দেশ পেলে। যেখানের রাজা কেবল আপনিই।
কিন্তু এমন আবার হয় নাকি! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? ভাবছেন রূপকথার গল্প জুড়লাম। আজ্ঞে না, এসব সত্যিকারেও হয়। আপনি চাইলেই পেতে পারেন এক্কেবারে নিজের দেশ। আর তেমনই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন দুই ব্যক্তি। কিনে ফেলেছেন আস্ত একটা দ্বীপ।
কী ভাবছেন, এঁরা তবে নির্ঘাত কোটিপতি! একেবারেই নয়। বরং এই দুজনের গল্প শুনলে চোখ কপালে উঠবে আপনার। গ্যারেথ জনসন ও মার্শ্যাল মেয়ার, এই দুই ব্যক্তি মিলে তৈরি করেছেন দৃষ্টান্ত। বুঝিয়ে দিয়েছেন, পকেটের রেস্ত নয়, রাজা হতে লাগে বুদ্ধি।
আরও শুনুন: ২২ বছর মুখে তোলেননি সবজি, টাকা দিলেও খাবেন না… ধনুক ভাঙা পণ তরুণীর
গ্যারেথ ও মার্শ্যাল, দুজনে মিলে ২০১৮ সালে একটি স্টার্টআপ খোলেন, যার নাম দেন ‘লেটস বাই অ্যান আইল্যান্ড’। শুধু তাই নয়, নিজেদের নামে একটি দ্বীপ কিনে দেখিয়েও দিয়েছেন তাঁরা। ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত এই দ্বীপটি কেনার জন্য তাঁরা একটি ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেন শুরু করেন। যেখান থেকে উঠেছিল প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। জোগার করে আনেন ইনভেস্টরও।
২০১৯ সালের মধ্যেই যথেষ্ট টাকা পয়সা জোগার করে ফেলেন তাঁরা। তারপরেই ১.২ একরের ওই দ্বীপটি কিনে ফেলেন দুজনে। আপাতত সেই দ্বীপটিকে পর্যটনের জন্য ঢেলে সাজাচ্ছেন দুজন। তাঁদের ইচ্ছা, পর্যটকেরা আসুন আর তাঁদের ‘প্রাইভেট আইল্যান্ড ফ্যান্টাসিতে’ বাস করে যান দু-একটা দিন। ‘প্রাইভেট আইল্যান্ড ফ্যান্টাসি’, নিজেদের দেশের এমনই নাম রেখেছেন গ্যারেথ ও মার্শ্যাল।
আরও শুনুন: হারিয়ে গিয়েছিল ৩,০০০ বছর আগে, মাটির নিচে গবেষকেরা খোঁজ পেলেন এই আশ্চর্য ‘সোনার’ শহরের
শুধু তাই নয়, নিজের দেশের জাতীয় পতাকাও ডিজাইন করে ফেলেছেন তাঁরা। এখনও সরকারি ভাবে দেশের মর্যাদা না পেলে স্বায়ত্ত্বশাসিত দেশগুলি যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়, তার অনেকগুলিই পাচ্ছে গ্যারেথদের দেশ।
এর আগেও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন গ্যারেথ। চেনা দেশের অজানা পর্যটনস্থলগুলি খুঁজে বের করে এনে পর্যটকদের কাছে সেগুলিকে তুলে ধরাই ছিল তাঁর সংস্থার লক্ষ্য। ১৫ বছর আগে থেকেই নিজের দেশ কেনার ভাবনাটা ঘুরছিল মাথায়। নিজের সেই পরিকল্পনায় মার্শ্যালকেও শামিল করে নেন গ্যারেথ। ব্যাস, তারপর লেগে পড়লেন নতুন দেশ গড়ার কাজে। এবং শেষমেশ তা বাস্তবায়িতও হল।
গ্যারেথদের এই আশ্চর্য ভাবনা অবাক করে দিয়েছে বিশ্বকে। সত্যিই যদি যুদ্ধ ছাড়া, রক্তপাত ছাড়া, সেনাবাহিনী ছাড়া এমন ভাবে নতুন দেশের সর্বাধিপতি হওয়া যেত, কেমন হত ব্যাপারখানা বলুন তো। মন্দ হত না বলুন।