সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে সবকিছুই। এমনকি বিয়ের নিমন্ত্রণও। হাতে হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়া এখন অতীত। নতুন ট্রেন্ড ডিজিটাল কার্ড! আজকাল বেশিরভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানেই নিমন্ত্রণ পত্র যাচ্ছে ডিজিটাল রূপে। কিন্তু এই ডিজিটাল কার্ডই হয়ে উঠছে জালিয়াতির নয়া অস্ত্র! ব্যাপারটা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ডিজিটাল দুনিয়ায় অপরাধও ডিজিটাল! সাইবার দুর্নিতি রুখতে কালঘাম ছুটছে প্রশাসনের। প্রতিদিন সামনে আসছে নতুন অপরাধের ফিকির! কে বানাচ্ছে সেসব, কারা রয়েছে নেপথ্যে, কেউ জানে না! সকলের অন্তরালে থেকেই অপরাধ দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই ডিজিটাল দস্যুরা। সম্প্রতি তাদের নজর পড়েছে বিয়ের বাজারে। সেখানেও দুর্নিতির নয়া ফিকির হাজির। সাবধান না হলেই ফাঁকা হবে অ্যাকাউন্ট।
শীত মানেই বিয়ে! এক নয়, একাধিক নিমন্ত্রণ মিলতে পারে। তবে নিমন্ত্রণ এলেই যে খুশির হাওয়া বইবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। উলটে ফাঁকা হতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, জালিয়াতির এই নতুন ফিকির এমনটাই। ঠিক কী হবে?
প্রথমেই অচেনা নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসবে। খুললে দেখা যাবে বিয়ের নিমন্ত্রণ পাটিয়েছে কেউ। একটা মেসেজ আর একটা ডিজিটাল কার্ড রয়েছে। মেসেজ অচেনা নাম্বার থেকে এলেও, সেখানে যার বিয়ের কথা লেখা থাকবে তিনি পরিচিত বৃত্তের। স্বাভাবিক ভাবেই ডিজিটাল কার্ডে ক্লিক করতে মন হবে। একবার এমনটা করে ফেললেইউ বিপদ। অল্প সময়ের মধ্যে মোবাইলে ডাউনলোড হয়ে যাবে একটা অ্যাপ। এই সেই বিশেষ অ্যাপ যা মোবাইলে থাকলে অন্য কেউ মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ পেতে পারে। অনেকসময় কোডও আসতে পারে। মেসজেই নির্দেশ আসবে ওই কোড অ্যাপের মধ্যে দেওয়ার। সেইমতো এমনটা করে ফেললে, আর কিছু করার নেই। বোঝার আগেই সাফ হবে অ্যাকাউন্ট। অন্যান্য তথ্যও চলে যাবে হ্যাকারদের হাতে। কী ভাবছেন, বিয়ের নিমন্ত্রণের নাম করেও এমন গোলমাল হতে পারে?
আজ্ঞে হ্যাঁ! এমনটাই হচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরে। বিয়ের মরশুমে নিমন্ত্রন আসাই স্বাভাবিক। অনেক সময় অল্প পরিচিত বা দীর্ঘদিন কথা হয়নি এমন কারও বিয়ের নিমন্ত্রন মিলতে পারে। ডিজিটাল কার্ডও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে আজকালকার দুনিয়ায়। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না সম্পূর্ণ ঘটনায়। তাও যদি বিষয়টা জানা থাকে ভালো, না জানলে যে কেউ শিকার হতে পারেন। হ্যাকাররা এখানেও নিজেদের বুদ্ধির পরিচয় দেয়! বেছে বেছে এমন মানুষকে টার্গেট করে যাদের এইসব বিষয়ে ধারণা একটু কম। মূলত বয়স্করা। কাজেই না বুঝে কার্ডের নামে আসা ওই ফাইলে ক্লিক করে ফেলেন অনেকেই। বাকিটা সময়ের অপেক্ষা, নিজেরাই নিজেদের আখের গুছিয়ে চম্পট দেবে ডিজিটাল দস্যুরা।
হিসাব বলছে, চলতি বছরে এমন সাইবার দুর্নিতির শিকার হয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। সবমিলিয়ে খোয়া গিয়েছে কয়েক হাজার কোটি। টাকার অঙ্কটা শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। কিছুক্ষেত্রে টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। সবথেকে বেশি জালিয়াতি হয়েছে ডিজিটাল অ্যারেস্ট এবং এই বিয়ের নিমন্ত্রনের নাম করে। প্রথমে কেউ বুঝতেই পারতেন না জালিয়াতি হচ্ছে! তাই হ্যাকারদের নির্দেশ মতো ওটিপি দেওয়া বা অন্যনায় কাজ করে ফেলতেন। বর্তমানে সরকারি প্রচার সেই প্রবণতা কমিয়েছে। তবে পুরোপুরি থামানো যায়নি, বরং নতুন নতুন ফন্দি এঁটে মানুষ ঠকানোয় মত্ত হয়েছে অপরাধীরা। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোবাইলে পরিচিত নাম্বার ছাড়া আর কারও ফোন না ধরাই মঙ্গল। মেসেজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আরও কড়াভাবে মানা উচিত। কোনওভাবে জালিয়াতির আঁচ পেলেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানাতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।