গাছে কোপ পড়লেই নাকি ছোটে রক্তের ফোয়ারা। রূপকথার গল্প, নাকি সত্যি? আসুন, তাহলে শুনেই নেওয়া যাক।
কানকাটা রাজাকে নিয়ে সেই রূপকথার গল্পের কথা মনে আছে? সেখানে ঢুলিকে গাছ কাটতে বারণ করেছিল সে গাছ নিজেই। কিন্তু বাস্তবে তো আর গাছের কথা বলার উপায় নেই। মানুষ ডাল কাটলে গাছের আঘাত লাগে, বিজ্ঞান এমন কথা বললেই বা কে শুনছে! কিন্তু ভাবুন তো, কোনও গাছ কাটলেই যদি ঝরঝরিয়ে নেমে আসে রক্তের ধারা, তাহলে?
আরও শুনুন: পুরুষ নয়, শরীরী প্রেমের সাধ মেটাচ্ছে গাছ! সুখের গোপন কথা ফাঁস মহিলার
কোনও রক্তমাংসের প্রাণীকে আঘাত করলে যেভাবে সে রক্ত ঝরায়, একইভাবে নাকি এই বিশেষ গাছের গায়ে কোপ পড়লেই রক্ত ঝরে। না না, আজগুবি নয়, নয় মনগড়া কল্পকাহিনিও। এ একেবারে সত্যি কথা। এই গাছটির নাম ড্রাগন ব্লাড। বিজ্ঞানসম্মত নাম ড্রাকাইনা সিনাবারি। ইয়েমেনের সকোট্রা দ্বীপপুঞ্জে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। সে দেশের জাতীয় গাছও এই ড্রাগন ব্লাড। এমনিতে গাছগুলিকে দেখতে আর পাঁচটি সাধারণ গাছের মতোই। বেরির মতো মিষ্টি ফলও ধরে এই গাছে। ১০ থেকে ১২ মিটার উঁচু হলেও, গাছগুলি এমনভাবেই বেড়ে ওঠে যে তলার শাখাপ্রশাখাগুলি আকারে ছোট, কিন্তু উপরদিকের ডালপালাগুলি বড়সড়। ফলে দূর থেকে একে দেখায় ছাতার মতো আকারের। বেশি তাপমাত্রাতেই এই গাছ জন্মায়, আবার বেঁচেও থাকে অনেক দিন। প্রায় ৬৫০ বছর ধরে ড্রাগন ব্লাড ট্রি বেঁচে থাকতে পারে বলেই শোনা যায়। আর সেই গাছের গায়ে আঘাত করলেই নাকি বেরিয়ে আসে রক্তের মতো লাল রঙের ঘন তরল।
সত্যিই কি রক্ত ঝরে এই গাছের গা থেকে?
আসলে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় অভ্যস্ত বলেই এই গাছ হাওয়া, মেঘ এমনকি কুয়াশা থেকেও জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে, আর তা সঞ্চয় করে রাখে। এই গাছের ডাল কাটলে যে তরলটি বেরোয়, তা আসলে এক ধরনের রেসিন। এই রেড রেসিন রং তৈরি করা থেকে লিপস্টিক শিল্পেও ব্যবহৃত হয়। জানা যায়, পুরনো দিনে ইতালির বেহালাবাদকেরা তাঁদের বাদ্যযন্ত্রকে বার্নিশ করার কাজে ড্রাগন ব্লাড গাছের রেসিন ব্যবহার করতেন। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা আবার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করেন এই জিনিসটিকে। তাঁদের ধারণা, রোগ নিরাময়ের আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই ‘গাছের রক্তের’।
আরও শুনুন: দেখতে হুবহু পশু কিংবা পাখির মতো! এইসব ‘বহুরূপী’ গাছকে চেনেন কি?
গোড়ায় যে কথা বলেছিলাম, গাছের গা থেকে রক্ত বেরোলে হয়তো গাছ কাটা থমকে যেতে পারে। কিন্তু তা সত্যি হয়নি এই গাছের ক্ষেত্রেও। বরং ওই রেড রেসিনের লোভেই আরও বেশি করে কাটা পড়ছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি। রক্ত ঝরালেও, মানুষের লোভের হাত থেকে নিস্তার নেই তার।