প্রায় দেড় লক্ষ বছর ধরে থাকতে হবে জেলে। মহিলাকে এমনই সাজা শুনিয়েছিল আদালত। কিন্তু কী অপরাধে এহেন লম্বা সাজা পান ওই মহিলা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পুরাণে এমন কথা হামেশাই শোনা যায় যে, পাপের শাস্তি হিসাবে বরাদ্দ নরকবাস। আর সেও নিতান্ত কম দিনের জন্য নয়। লক্ষ লক্ষ বছরের ভয়ংকর নরকে থেকে করতে হবে পাপস্খালন। কিন্তু বাস্তবে এমন লক্ষ বছরের সাজা হয় নাকি? প্রাকৃতিক ভাবে অতদিন বেঁচে থাকাই তো সম্ভব নয় কোনও মানুষের পক্ষে। তাই মানুষের জীবৎকালের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এখানে নির্ধারিত হয় কারাদণ্ড। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে বড়জোর কাউকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা শোনাতে পারে আদালত। কিন্তু এখানে তেমনটা হয়নি। এই মহিলার জন্য দশ বছর কি চোদ্দ বছরের কারাবাস নয়, প্রায় দেড় লক্ষ বছরের কারাদণ্ড ধার্য করেছেন বিচারপতি। ঠিক করে বললে, এক লক্ষ ৪১ হাজার ৭০৮ বছর। হ্যাঁ, ঠিক এতদিনের জন্যই জেলের সাজা শোনানো হয়েছে ওই মহিলাকে।
আরও শুনুন: জোর করে ঘুম ভাঙানো অপরাধ! এমন বিধান আছে নাকি দেশের সংবিধানে?
ভাবছেন, এসবই নিছক গল্প? আজ্ঞে না। বাস্তবেই এমনই ঘটনা ঘটেছিল থাইল্যান্ডে। শ্যাময় থিপ্যাসো নামে সে দেশের এক মহিলাকেই এহেন শাস্তি দেওয়া হয়। এত লম্বা সাজার কারণ একটাই, তিনি যে অপরাধটি করেছেন তা শুধু তাঁর নিজের দেশের পক্ষেই ক্ষতিকারক নয়, একইসঙ্গে অন্যান্য দেশের অনেক মানুষকেও তার ফল ভুগতে হয়েছে। আর সেই কারণেই এমন দীর্ঘমেয়াদি সাজা পেয়েছেন ওই মহিলা।
কিন্তু তাঁর অপরাধটা ঠিক কী? জানা গিয়েছে, একটি চিটফান্ড প্রকল্পের সূত্র ধরে অসংখ্য মানুষকে বোকা বানিয়েছিলেন তিনি। মে শ্যাময় ফান্ড নামে ওই প্রকল্পটি খুলেছিলেন তিনি। এমনিতে সে দেশের পেট্রোলিয়াম দপ্তরে কাজ করতেন মহিলা। রয়্যাল থাই এয়ারফোর্সের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে চিট ফান্ডের প্রকল্পটিকে বৈধ হিসেবে দেখিয়েছিলেন তিনি। ভান করা হয়েছিল যেন একটি তেলের সংস্থার সঙ্গে এই চিট ফান্ডটি যুক্ত, যার ফলে সেখানে বিনিয়োগ করলে বড় অঙ্কের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সেই আশ্বাসে ভুলেই মহিলার ফাঁদে পা দেন অন্তত ১৬ হাজার মানুষ। তাদের ঠকিয়ে ২০০০ থেকে ৩০০০ লক্ষ মার্কিন ডলার লাভ করেছিলেন ওই মহিলা, এমনটাই জানান তদন্তকারীরা। প্রতারিত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু থাইল্যান্ডের মানুষই নন, ছিলেন ভারতের কেরলের কিছু মানুষও। আর দেশবিদেশে এভাবে প্রতারণার জাল বিছানোর জন্য আক্ষরিক অর্থেই বড় শাস্তি পান ওই মহিলা।
আরও শুনুন: বাঁচাতে হবে নেতাজিকে, স্বামীকেই খুন করেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রথম গুপ্তচর নীরা
তবে গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আসলে ১৯৮০ সালে এই সাজা দেওয়া হয়েছিল মহিলাকে। কিন্তু পরবর্তী কালে সে দেশের আইন বদলে যায়। তার ফলে মাত্র আট বছর জেলে কাটিয়েই ফের মুক্ত পৃথিবীর আলো দেখেন ওই মহিলা।