কেবল বই দিয়ে তৈরি করা একটি স্থাপত্য। তাও কিনা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম পার্থেননের আদলে। কিন্তু কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, আসলে এক গভীর বার্তাও ধারণ করে আছে এই স্থাপত্যটি। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গ্রিক দেবী আথেনার পূজার্চনার উদ্দেশ্যে প্রাচীন গ্রিসে তৈরি হয়েছিল পার্থেনন মন্দির। কেবল ধর্মীয় কারণে নয়, সৌন্দর্যের দিক থেকেও রসিকদের তারিফ আদায় করে নিয়েছিল এই স্থাপত্যটি। ৪৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল এই অপূর্ব সুন্দর মন্দিরটির নির্মাণকাজ। কিন্তু ১৬৮৭ সালে অটোমান হামলায় বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পার্থেনন। আর সেই পার্থেনন মন্দিরের আদলেই জার্মানিতে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিশেষ স্থাপত্যটি, যার নাম ‘দ্য পার্থেনন অফ বুকস’।
আরও শুনুন: মানুষের মতো কথা বলতে পারে ব্যাঙের ছাতাও! গবেষণায় উঠে এল আশ্চর্য তথ্য
গ্রিক পুরাণ মতে, আথেনা ছিলেন জ্ঞানের দেবী। গ্রিসের পার্থেনন মন্দিরে তাঁরই উপাসনা করা হত। ‘দ্য পার্থেনন অফ বুকস’ প্রচলিত অর্থে মন্দির নয় বটে, তবে এও পরোক্ষে জ্ঞান এবং বিদ্যার উপাসনাস্থল। কারণ কেবলমাত্র বই দিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই অভিনব স্থাপত্যটি। তবে যে কোনও বই নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হওয়া প্রায় ১ লাখ বই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই স্থাপত্যটি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত বইয়ের তালিকা খুঁজে প্রায় ৭০,০০০ নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা তৈরি করেন ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষার্থী। যার থেকে বেছে নেওয়া হয় ১৭০টি নিষিদ্ধ বইকে। এই স্থাপত্যটির নকশা তৈরি করেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, ৭৪ বছর বয়সি মার্থা মিনুজিন। আসল পার্থেননের আয়তন মেনেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘দ্য পার্থেনন অফ বুকস’। এটি লম্বায় ৭০ মিটার, চওড়ায় ৩১ মিটার ও উচ্চতায় ১০ মিটার।
আরও শুনুন: শুধু পরিবেশেই নয়, রক্তেও বিষ ঢালছে মাইক্রোপ্লাস্টিক! হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি
কেন তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ স্থাপত্যটি? সে কথার জবাব দিয়েছেন এই স্থাপত্যের পরিকল্পক মার্থা মিনুজিন নিজেই। তিনি জানিয়েছিলেন, যে কোনওরকমের সেন্সরশিপ তথা নজরদারি যাতে বন্ধ হয়, সেই বার্তাই এই স্থাপত্যের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। আসলে নজরদারি তো ক্ষমতারই একরকমের প্রকাশ। আসল পার্থেনন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ক্ষমতার আগ্রাসনের কারণে। অদ্ভুতভাবে, এই বিকল্প পার্থেননও কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে এক ধ্বংসের জায়গাতেই। যে ধ্বংস ঘটেছিল নাৎসি জার্মানিতে। ১৯৩৩ সালে সেখানে অসংখ্য বই পুড়িয়ে ফেলেছিল নাৎসিরা। যেসব বইয়ের লেখক ছিলেন ইহুদি, অথবা কমিউনিস্ট কিংবা কোনও না কোনোভাবে নাৎসি মতবাদের সমালোচক, তাঁদের সকলের বইয়েরই ঠাঁই হয়েছিল সেদিনের আগুনে। কিন্তু বই, বা তার মধ্যে থাকা ভাবনাকে তো আদতে কোনও আগুনেই পোড়ানো যায় না। সেই বার্তাই দিচ্ছে বইয়ের উপাসনাস্থল, ‘দ্য পার্থেনন অফ বুকস’।