ধর্ম মানে তো তাই, যা ধারণ করে। আর সেই ধর্মে আসলে কোনও ভেদাভেদ নেই। হ্যাঁ, আলাদা আলাদা ডাকনাম অবশ্যই রয়েছে। তবে সর্বশক্তিমান যিনি, তিনি এক এবং অভিন্ন। আর এই ভাবনা থেকেই সব ধর্মের সব মানুষের জন্য অবারিত এই মন্দিরের দরজা। সমস্ত ধর্মের ভক্তদের কাছেই দারুণ জাগ্রত এই মন্দির। আসুন, শুনে নিই তামিলনাড়ুর এই ব্যতিক্রমী মন্দিরের গল্প।
কোথাও মন্দিরে মহিলাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তো কোথাও ঠাঁই পায় না দলিতেরা। ধর্মস্থান মাত্রেই যেন নানাবিধ বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। তবে তামিলনাড়ুর এই মন্দির যেন সেই বাঁধাধরা ছকের বাইরে গিয়ে এক আশ্চর্য। শ্রী বড়ে সাহেব জীবা সমাধি মন্দির আদতে কোনও বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য নয়। বরং এখানে আসতে পারেন জাতি-ধর্ম নির্বেশেষে সকলেই। প্রার্থনা করতে পারেন, নিতে পারেন প্রসাদও।
আরও শুনুন: কোথাও প্রসাদে মানা, কোথাও বসে ভূতের মেলা… অদ্ভুত রীতি দেশের এই ব্যতিক্রমী মন্দিরগুলিতে
তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম জেলার ছিন্নাবাবু গ্রামে রয়ছে এমনই একটি আশ্চর্য মন্দিরটি। এই মন্দির আদতে বড়ে সাহেবের সমাধি। তবে কী ভাবে সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে হিন্দু মন্দির, ভাবছেন তো? সেটাই তো এই মন্দিরের বিশেষত্ব। স্থানীয় বিশ্বাস, মুসলিম ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বড়ে সাহেব। তবে তিনি পরিচিত ছিলেন ভগবান অরুণাচল তথা শিবের অন্যতম ভক্ত হিসেবে। কথিত আছে, বড়ে সাহেবের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে তাঁকে দর্শন পর্যন্ত দিয়েছিলেন মহাদেব। তাঁর কৃপাদৃষ্টিতেই এই বড়ে সাহেব অর্জন করেছিবেন আশ্চর্য কবিরাজি ক্ষমতা। বকুল গাছের নিচে বসে ভক্তদের রোগব্যধি নিরাময় করতেন তিনি। আর যা নাকি ছিল অব্যর্থ। ক্রনিক ব্যধি সারাতে নাকি তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। প্রায় ১৪৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন বড়ে সাহেব, তার পরে সমাধিস্থ হন। আর সেই স্থানেই গড়ে ওঠে তাঁর মন্দির।
আরও শুনুন: ‘যখন বেঁচে ছিলাম সংগীত চর্চা করতাম…’ আগন্তুকের কথায় হতবাক স্বয়ং গিরিশচন্দ্র ঘোষ
জীবদ্দশায় ভক্তদের ধর্ম নিয়ে একেবারেই ভাবিত ছিলেন না বড়ে সাহেব। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ নির্বিশেষে মানুষের রোগের নিরাময় করেছেন তিনি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই থানেই যেন ফিরে এসেছেন বড়ে সাহেব। তাঁর সমাধির পাশেই রয়েছে শিবের একটি মন্দির। রয়েছে সেই ঐতিহাসিক বকুলগাছটিও। আজও ওই মন্দিরে দলে দলে আসেন নানা ধর্মের মানুষ। বিশ্বাস করেন, যে কোনও ধরনের অসুখ সারানোর ক্ষমতা রাখে এই বড়ে সাহেবের মন্দির। বিশেষত মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় মন্দিরে। যেখানে দলে দলে যোগ দেন অজস্র ধর্মের মানুষ। দেশ জুড়ে যখন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ, সেখানে এই মন্দির যেন বলে চলছে অন্য সম্প্রীতির গল্প। যা এই আকালে কম ভরসা জোগায় না মোটেই।