বিয়ে ঠিক হয়েছে, অথচ কোনও তৃতীয় পক্ষের কথায় ভেঙে গেল বিয়ে! সেই তৃতীয় পক্ষকে কেউই বিশেষ ভালো চোখে দেখে না সাধারণত। তবে এই যুবকের কথা আলাদা। দম্পতির মধ্যে সমস্যা তৈরি করে তিনি বিপাকে পড়েন না, উলটে লাভ করেন হাজার হাজার টাকা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একসময় পাড়ায় পাড়ায় এমন অনেকেই থাকতেন, অন্যের ভালো যাঁরা খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না। দেখা যেত, কারও বিয়ে ঠিক হয়েছে খবর পেলেই তাঁরা দু-একটা আলটপকা কথা বলে বসতেন। যার দরুন বর বা কনের বাড়িতে একটু খটকা জেগে উঠত। অনেকসময় সেই ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই ভেঙেও যেত বিয়ে। অনেকে অবশ্য শুধু কথা বলেই সন্তুষ্ট হতেন না, রীতিমতো উঠেপড়ে বিয়ে ভাঙার তোড়জোড় করতেন। যে বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে, সেই ঠিকানায় উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে ভাঙতেন তাঁরা। তবে কথা হচ্ছে, এইসব মন্থরা-সুলভ কাজকর্ম বরাবর নিন্দেমন্দই কুড়িয়েছে। বিয়ে ভেঙে কেউ ব্যক্তিগত লাভ কুড়িয়েছেন, এমনটা চট করে শোনা যায়নি। তবে, এই যুবকের ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। বিয়ে ভাঙেন তিনি, তবে পেশাদারভাবে। লোকে যেমন পেশাদারভাবে ঘটকালি করে, অর্থাৎ পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সম্বন্ধ করে দুই হাত এক করে; ইনি ঠিক তার উলটো কাজ করেন। গাঁটছড়া বাঁধার আগেই বিয়ে ভেঙে দেন। আর এই পেশার দৌলতেই প্রচুর টাকা আয়ও করেন তিনি।
কী ভাবছেন, আজগুবি কথা? আজ্ঞে না, সবটাই সত্যি। ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’-এর কথা তো শোনাই যায়, তবে স্পেনের যুবক আর্নেস্টো রেইনারেস ভারিয়া হলেন ‘প্রফেশনাল ওয়েডিং ডেস্ট্রয়ার’। নিছকই মজা করে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপনের আদলে। সেখানে বলা ছিল, যদি কেউ বিয়ে করতে না চান, অথচ বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করতেও না পারেন, তাহলে তিনিই হবেন মুশকিল আসান। বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন তিনিই। সঙ্গে দেওয়া ছিল ফোন নম্বর। আশ্চর্যের কথা হল, এই কথাকে সত্যি ধরে নিয়েই একের পর এক অনুরোধ আসে ওই যুবকের ফোন নম্বরে। আর সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায় তাঁর ব্যবসা।
ওই যুবক জানিয়েছেন, শুধু বিয়ের স্থান এবং সময় জানিয়ে দিতে হয় তাঁকে। কখনও সেখানে হাজির হয়ে গোলমাল বাধান, কখনও আবার কনে বা বর কাউকে নিয়ে পালিয়ে যান। যেভাবেই হোক না কেন, বিয়ে ভেস্তে দিয়ে তবেই থামেন তিনি। মাঝেমধ্যে অবশ্য গালিগালাজ কি মারধর ফাউ জোটে। তার জন্য আলাদা বিল দাবি করেই ওটুকু সয়ে নেন যুবক। আর এমনিতে এক-একটি বিয়ে ভাঙার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় তাঁর পারিশ্রমিক মোটামুটি হাজার ৫০ টাকা।
ইদানীং কালে ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’-দের রমরমা। আগে যেমন বাড়ির লোকজনেরাই পরিকল্পনা করে বিয়ের জোগাড়যন্ত্র করতেন, এখন ছোট পরিবার আর ব্যস্ত জীবনে সেই দায়িত্ব পেশাদারদের হাতে তুলে দিয়েই নিশ্চিন্ত হতে হয়। একইভাবে পাড়া ভেঙে গিয়েছে কবেই। পড়শিদের সঙ্গে যোগাযোগও নিতান্তই ক্ষীণ। অতএব বিয়ে ভাঙার কাজও কে করবেন, পেশাদারেরা ছাড়া? সেই পথটিই দেখিয়ে দিয়েছেন স্পেনের এই যুবক।