কথায় বলে, আসলের চেয়ে সুদের স্বাদ সবসময়েই বেশি। আর তাই দাদু-দিদার কাছে একটু বেশিই আদরের হয় নাতি-নাতনিরা। তবে পাটনার মেয়ে সৃজার জীবনে তার দাদু-দিদার ভূমিকা মা-বাবার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। আর সেই আদর-যত্ন সুদে-আসলে ফেরত দিয়েছে সৃজাও। পরীক্ষায় দারুণ রেজাল্ট করে দাদু-দিদার মুখ উজ্জ্বল করেছে সে। কিন্তু সৃজার সাফল্যের এই গল্পের নেপথ্যে রয়েছে অন্ধকারও। কেননা, শৈশবেই সে পেয়েছিল বাবার প্রত্যাখ্যান। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সৃজার গল্প।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর, একরত্তি সন্তানকেও ফেলে চলে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। বাবার দায়দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, ফিরেও তাকাননি দুধের শিশুটির দিকে। তিনি মজেছিলেন অন্য সংসার আর নতুন জীবনের নেশায়। মৃত মেয়ের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন দুই প্রবীণ মানুষ, সম্পর্কে যাঁরা শিশুটির দাদু-দিদা। তাঁদের আশ্রয়েই বড় হয়েছে পাটনার বাসিন্দা সৃজা। এখন যার সাফল্যের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
আরও শুনুন: একই গাছে ফলে ৩০০ প্রজাতির আম, আশ্চর্য গাছের মালিক লখনউয়ের বৃদ্ধ
অনেক সময়ই বাবা-মায়ের অনুপস্থিতে দাদু-দিদারাই হয়ে ওঠেন শিশুর অভিভাবক। সে নিয়ে বাধে দ্বন্দ্বও। কিছুদিন আগেই ‘পোস্ত’ নামে একটি বাংলা ছবিতে আমরা দেখেছি এমনই অধিকারের আইনি লড়াইয়ের গল্প। তবে সৃজার ক্ষেত্রে তার সব কিছু ছিল দাদু-দিদাই। অধিকার নিয়ে লড়াই করা তো দূরের, জীবনে একবারও মেয়ের খোঁজ পর্যন্ত নেননি তাঁর জন্মদাতা বাবা।
আরও শুনুন: Meme ফেরাল ভাগ্য, বাতিল করেও মহিলাকে ফের ইন্টারভিউতে ডাক সংস্থার
এ বছর বোর্ডের পরীক্ষায় বসেছিল সেই মেয়ে। শুধু ভাল ফলই করেনি, সাফল্যের নিরিখে রীতিমতো চমকে দিয়েছে পরিবারের সকলকে। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৯.৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সৃজা। সংস্কৃত ও বিজ্ঞানে একশোয় একশো পেয়েছে সে। অন্যান্য বিষয়েও তার নম্বর চোখে পড়ার মতো। আর তার এই সাফল্য বোধহয় সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে দাদু-দিদাকেই। গর্বিত দিদা জানিয়েছেন, মেয়ের রেজাল্ট দেখে নিশ্চয়ই এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্ষেপ করছে সৃজার বাবা। দুরন্ত রেজাল্ট করে সে-রাজ্যের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সৃজা। স্বাভাবিক ভাবেই রেজাল্ট বেরোতে না বেরোতেই তার বাড়িতে উপচে পড়ে সাংবাদিকদের ভিড়। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারেই সৃজার দিদা জানিয়েছিলেন এই কথা। আর তার পরেই সৃজার গল্প ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিজেপি নেতা এবং সাংসদ বরুণ গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন সৃজার দিদার সেই সাক্ষাৎকার। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয় নেটদুনিয়ায়। কমেন্ট এবং শুভেচ্ছাবার্তায় ভরিয়েছেন নেটিজেনরাও। বড় হয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সৃজা। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে। এই মেয়ে যে ভবিষ্যতে দাদু-দিদার নাম আরও উজ্জ্বল করবে, তা এককথায় মেনে নিয়েছেন প্রায় সকলেই।