জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষভাব সাজবেন কৃষ্ণ। তার জন্য তৈরি হচ্ছে বাহারি পোশাক। কিন্তু সেসব তৈরি করছেন মথুরার এক মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। হালে নয়, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ছোট্ট গোপালের জন্য রং বেরঙ্গের পোশাক তৈরি করেন ওই মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মথুরা ধাম। শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র। এখানকার অলিতে গলিতে কৃষ্ণ মন্দির। তাতে বছরভর ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বিশেষ ভাবে সেজে ওঠে মথুরা। সব মন্দিরেই কৃষ্ণকে সাজানো হয় বাহারি পোশাকে। কিন্তু সেসব তৈরি করেন এক মুসলিম পরিবার।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। ধর্মবিশ্বাস আলাদা হলেও দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কৃষ্ণের পোশাক তৈরি করাই মথুরার ওই পরিবারের প্রধান জীবিকা। প্রায় সব সদস্যই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সারাবছর শহরের বিভিন্ন মন্দির বাড়িতে কৃষ্ণের জন্য পোশাক পাঠিয়ে থাকেন তাঁরা। জন্মাষ্টমী এলে ব্যস্ততা চরমে পৌঁছয়। এই সময় মূলত গোপালের পোশাক তৈরি করেন এই মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। বরাত আসে দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও। স্থানীয়দের দাবি, এই পরিবারের সদস্যরা রীতিমতো যত্ন নিয়ে গোপালের পোশাক তৈরি করেন। তাই প্রতিটি পোশাক হয় নিখুঁত। কিছু ক্ষেত্রে অনন্যও বটে। দাম ঠিক হয় সেইমতো। ১০ টাকা থেকে পোশাকের দাম শুরু। রয়েছে ১০ হাজার টাকা দামের পোশাকও। বর্তমানে পরিবারের প্রধান হিসেবে এই কাজের প্রতিনিধিত্ব করেন মহম্মদ ইকরার। জানা যায়, তাঁর ঠাকুরদাই প্রথমবার গোপালের পোশাক তৈরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাতে যুক্ত হন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। পরিবর্তী প্রজন্মও সরে আসেনি। তাঁরাও একইভাবে গোপালের পোশাক তৈরি করেন।
সবথেকে মজার বিষয়, পোশাক তৈরির জন্য কোনও মেশিন ব্যবহার করেন না এই পরিবারের সদস্যরা। সবটাই হাতে সেলাই করে তৈরি করেন। তাই এঁদের তৈরি পোশাক কিছুটা হলেও অন্যরকম হয়। সেই কারণেই এত চাহিদা। জন্মাষ্টমীর আগে দম ফেলার সময় পান না ইকরার পরিবারের সদস্যরা। এই মুহূর্তে কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ২০ জন। প্রত্যেকেই সমান ভাবে কাজ করেন। আর এই কাজে স্বয়ং কৃষ্ণও নাকি সাহায্য করেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, কোন পোশাক কীভাবে তৈরি হবে সেই নির্দেশ গোপাল নিজেই দেন। তাঁরা শুধু তৈরি করেন। বলাই বাহুল্য, স্রেফ কারিগরি নয় ভক্তি মিশিয়েই গোপালের পোশাক তৈরি করেন এঁরা। তাতেই সেজে ওঠেন মাধব।