নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেখানে আর সাবান জুটবে কী করে! দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এ কথা সত্যি। আর সেই পরিস্থিতি বদলে দিতেই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন এক ব্যক্তি। হোটেলের অব্যবহৃত বা ফেলে দেওয়া সাবান জোগাড় করেই সকলের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তিনি। আসুন শুনে নিই তাঁর সেই অভিনব কাজের গল্প।
একদিকে অভাব, অন্যদিকে অপচয়। শুধু ভারতবর্ষ নয়, উন্নয়নশীল প্রায় দেশগুলিতেই এ যেন খুব চেনা ছবি। সে ছবি বদলানো হয়তো সহজ কাজ নয়। সমাজ-অর্থনীতি আর রাজনীতির অনেক অঙ্ক এর ভিতর লুকিয়ে আছে। তবে একটু চেষ্টা করলে, অপচয় রোধ করা যায়। আর তা দিয়ে অভাবও মেটানো যায়। সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন সমীর লাখানি। বড় বড় হোটেলের অব্যবহৃত বা ফেলে দেওয়া সাবানকে রিসাইকেল করে তিনি তুলে দেওয়া শুরু করেছেন গরিব মানুষের হাতে।
আরও শুনুন: ঐতিহ্য মেনেই লক্ষ্মীলাভ, হাতের কাছে পুজোর ফুল পৌঁছে দিয়ে কোটিপতি দুই বোন
এর শুরুটা বেশ আচমকাই হয়েছিল। ভিনদেশের এক গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে তিনি দেখেছিলেন, এক মা তাঁর শিশু সন্তানকে স্নান করাচ্ছেন ডিটারজেন্ট দিয়ে। ছবিটা তাঁর কাছে অচেনা লাগেনি। বুঝেছিলেন প্রায় সব গরিব দেশে বা উন্নয়নশীল দেশেই, এ আসলে ঘোর বাস্তবিকতা। একটু খোঁজখবর করে জানতে পারেন, এরকম দেশগুলিতে মাত্র এক শতাংশ মানুষই স্নানের সময় ব্যবহারের জন্য সাবান কিনতে পারেন। বাকিরা অন্য কিছু দিয়েই কাজ চালান। তাতে নানা অসুখ বিসুখের সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু উপায় কী!
ভাবতে ভাবতে এই সমস্যা সমাধানে পথ পেয়ে যান তিনি। খেয়াল করে দেখেন, বড় বড় হোটেলগুলিতে অতিথিদের সাবান দেওয়া হয়। বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। কোনও ক্ষেত্রে অবশ্য আংশিক ব্যবহারের পর তা ফেলে দেওয়া হয়। এই অপচয়কেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন তিনি। শুরু করেন এই ধরনের সাবান সংগ্রহের কাজ। পরিশ্রম করতে হয়েছে বটে, তবে কাজটি দুরূহ ছিল না। হাতে পাওয়া সাবান এবার তিনি রাসাইকেল করা শুরু করেন। ব্যবহৃত সাবানগুলিকে বিশেষ জীবাণুনাশক পদ্ধতিতে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। তারপর তা বিলি করতে শুরু করেন গরিবদের মধ্যে। স্নানের সময় হাতে একটা সাবান পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে মুখে মুখে।
আরও শুনুন: টিভি-ফ্যান সবই চলে, অথচ আসে না বিদ্যুতের বিল! নয়া দিশা দেখাচ্ছেন পদ্মশ্রী জনক
ধীরে ধীরে নিজের এই কাজের পরিধি বাড়াতে থাকেন সমীর। তৈরি করেন ইকো-সোপ-ব্যাঙ্ক। প্রায় ৯ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন তিনি, যার স্বীকৃতি যেমন মিলেছে দেশের মাটিতে, তেমন প্রশংসা এসেছে বিদেশ থেকেও। গ্রামীণ মহিলাদের রোজগারের বন্দোবস্ত করে দিতেও নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তাঁর এই কাজ যেন সমাজের প্রতি তুলে রাখা এক বিশেষ বার্তাও। একদিকের অপচয় দিয়েই অন্যদিকের অভাব মেটানো যায়, হাসি ফোটানো যায় বহু মানুষের মুখে- চিরন্তন সেই সত্যিটিই তো সকলের সামনে নতুন করে তুলে ধরেছেন সমীর।