রামপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’! কৃষকের কাজই তো বীজ রোপণ করা, তাকে আবাদ করে সোনা ফলানো। জয়রাম কৃষক বটে, তবে ফলের আশা তাঁর নেই। শুধু আনন্দের জন্যই একের পর এক চারাগাছ পুঁতে চলেছেন জয়রাম। সেই চারাগাছেরা বড় হয়, বৃক্ষ হয়ে ওঠে। আলো দেয়, হাওয়ায় মাথা নাড়ায়। হরেক রকম পাখি এসে তাতে দোল খায়। এদিকে কোদাল, খুরপি আর চারাগাছ নিয়ে পাড়া-বেপাড়া ঘুরে বেড়ান জয়রাম। কোথা থেকে মাথা চাড়া দিল এই নেশা?
তখন কতই বা বয়স। বারো কি তেরো। দাদুর হাত ধরে গ্রামের অলিগলি ঘুরে বেড়াতেন জয়রাম। ফাঁকা জায়গা দেখলেই বসিয়ে ফেলতেন একটা দুটো চারা। ভারী ভাল লাগত তাঁর। ১৬ বছর বয়সে হারালেন সেই দাদুকেই। দাদুর স্মৃতিতে নিজের বাড়ির দাওয়ায় এগারোটা গাছ বসিয়ে দিয়েছিল ছোট্ট ছেলেটা। সেই থেকে শুরু। ঠাকুমা সব সময় বলতেন, গাছ লাগানোর কাজ যজ্ঞের চেয়ে কিছু কম পুণ্যের নয়। বেশ কয়েক বছর পরে হৃষিকেশে গিয়ে এক সাধুর মুখে শুনলেন সেই একই কথা। চমকে উঠলেন জয়রাম। হঠাৎ করেই জীবনের একটা লক্ষ্য খুঁজে পেয়ে গেলেন তিনি। এগারো থেকে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে কবে এগারোশো হয়ে গেল, আর তা যে কবে ৩১ হাজার হয়ে গেল, জানতেই পারেননি জয়রাম। এভাবে প্রায় চল্লিশ বছর কেটে গিয়েছে। এগারো লক্ষ গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন বলে হিসেব করতে পেরেছিলেন, তাও দু-বছর আগে।
আরও শুনুন: ফুল নাকি আর আগের মতো রঙিন নেই! কেন এমন দাবি বিজ্ঞানীদের, জানেন?
মধ্যপ্রদেশের শেওপুর জেলার বাসন্দ গ্রামে ঢোকার মুখেই যে হাইওয়েটা পড়ে, সেখানে অনেকটা অংশ জুড়ে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায়, পর পর নিম আর কলাগাছের সারি। সে সব গাছই জয়রামের নিজের হাতে লাগানো। বলতে বলতে খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ। খালের ধার থেকে শুরু করে, থানা চত্বর, সরকারি জমি, স্কুল বা মন্দিরের চাতাল, যেখানে পেরেছেন একের পর এক গাছ বসিয়ে গিয়েছেন জয়রাম। দামি কিছু গাছ নয়, সাধারণ কলা, নিম, আম, কাঁঠাল, যখন যা পেয়েছেন। শক্ত মাটি, এবং কম জলেও বেশ ভাল ভাবে বেঁচে থাকে গাছগুলো।
আরও শুনুন: পৃথিবীর সব পিঁপড়ে জোট বাঁধলে ওজনে সমান হবে সব মানুষের! দাবি বিজ্ঞানীদের
নিজের ১১ বিঘা মতো জমি আছে জয়রামের। সেখানে চাষ করেই কোনও মতে পরিবারের দিন গুজরান হয়ে যায়। তবে নিজের শখের জন্য কোনও দিন কারও কাছে হাত পাতেননি জয়রাম। যেটুকু যা, নিজের চেষ্টায় করেছেন। গ্রামের কচিকাঁচারা অবশ্য প্রায়শই সাহায্য করে তাঁকে। এখান ওখান থেকে জোগাড় করে এনে দেয় বীজ। জয়রাম বদলে তাদের বিস্কুট খাওয়ান। নিজের নার্সারিতে সেসব বীজ থেকে চারা তৈরি করেন জয়রাম। শুধু নিজের গ্রামেই নয়, প্রতিবেশী রাজ্য রাজস্থান ও উত্তরাখণ্ডে গিয়েও প্রচুর গাছ বসিয়ে এসেছেন এই বৃক্ষপ্রেমী মানুষটি।
শুনে নিন বাকি অংশ।