শাহজাহানের নাম শুনলেই আমাদের কী মনে আসে? তাজমহলের নাম, তাই তো? এই মুঘল সম্রাটকে আমরা মূলত মনে রেখেছি স্ত্রী মুমতাজ মহল-এর স্মৃতিতে এমন অপূর্ব স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার জন্যই। সেরকমই, নিজের প্রেমজীবনকে মনে রাখার মতো একটা গল্প তৈরি করে ফেলেছেন বসনিয়ার এক ৭২ বছরের যুবক ভোজিন কিউজিক।
বয়স বাহাত্তর হলে কী হবে, যুবকই বলতে হয় তাঁকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নাকি থিতিয়ে আসে প্রেমের জন্য বাঁধনছাড়া আবেগ। কিন্তু যে বয়সে মানুষ প্রেমের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে, সেই যৌবনেই যেন পৌঁছে গিয়েছেন ভোজিন কিউজিক। স্ত্রীর অভিযোগের জবাবে অভিনব এক উপহার দিয়ে চমকে দিয়েছেন তাঁকে। কী সেই উপহার? এমন একটা বাড়ি, যাকে ইচ্ছেমতো ঘোরানো যায়।
আরও শুনুন: কপিরাইট নেই ছবির, তবুও প্রতি বছর নোবেলজয়ীদের মুখ আঁকেন নিকোলাস
পৃথিবী ঘুরছে, তার মধ্যে আমরাও থাকছি, খাচ্ছি, ঘুরে বেড়াচ্ছি। তা বলে একটা ঘুরন্ত বাড়ির মধ্যে থাকা! হ্যাঁ, সেই কাজটাই করেছেন এই মানুষটি। তাও একার উদ্যোগে। ছ-বছরের চেষ্টায়, নিজে নিজে পড়াশোনা করে এই বাড়িটি বানিয়েছেন কিউজিক। ৭ মিটার অক্ষের ওপর বাড়িটি ঘোরানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার ঘোরার বেগও। সবচেয়ে ধীর গতিতে বাড়িটির একপাক ঘুরতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা, আর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়িটি ১ পাক সম্পূর্ণ করে মাত্র ২২ মিনিটে। কী ভাবছেন, শুনেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড় তো!
তাহলে আরও অবাক হবেন, যদি জানেন এই বাড়ি বানানোর জন্য কতটা একাগ্র ছিলেন কিউজিক। বাড়িটির নির্মাণকাজ তখন বেশ খানিকটা হয়ে গিয়েছে। এদিকে হৃদরোগের কারণে হাসপাতালে ভরতি হলেন কিউজিক। অথচ অসুস্থতার মধ্যেও তাঁর মাথায় ঘুরছে একটাই চিন্তা, বাড়ির কাজ শেষ করবেন কীভাবে। সেই অবস্থায় তিনি ডাক্তারকে অনুরোধ করেছিলেন, যে করে হোক আর একটা বছর যদি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। তাহলে তাঁর এই ঘুরন্ত বাড়ির কাজ শেষ করতে পারবেন তিনি। শেষমেশ তাঁর স্বপ্ন সার্থক হয়েছে। সার্থক হয়েছে ছ-বছরের পড়াশোনা ও শ্রম।
আরও শুনুন: আটত্রিশ মিনিটের যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল শ-পাঁচেক মানুষের, পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট যুদ্ধের কাহিনি জানেন?
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-কে জানিয়েছেন কিউজিক, তিনি এই ঘুরন্ত বাড়ি বানানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন নিকোলা টেসলা ও মিহাজলো পুপিন-এর থেকে। পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে এই দুই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার তাঁকে সাহায্য করেছে ঘুরন্ত বাড়ির নকশা নির্মাণ করতে। অসিলেটর নামে এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন টেসলা, যে ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল ডিভাইসের সাহায্যে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পরিধির কম্পাঙ্ক তৈরি করা যায় এবং তা বিবর্ধন করা যায়। এই আবিষ্কারটিই ঘুরন্ত বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কিউজিকের প্রধান সহায়ক। আর তাতেই অনেকে মনে করছেন হয়তো ভূমিকম্প থেকেও নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হবে এই বাড়ি।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারুক বা না পারুক, মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে কিন্তু এই বাড়ির জুড়ি নেই। এই ঘুরন্ত বাড়িতে ঘরে বসেই নজরদারি করা যাবে বাইরের ভুট্টা খেতে। আবার গৃহিণীর মুখ গোমড়া হলেই বাড়ির মুখ ঘুরিয়ে সামনে এনে ফেলা যাবে পাহাড় ও সবুজে ঘেরা উত্তর বসনিয়ার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি। আর যদি বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে যায় কোনও এক পাহাড়ি নদী, তাহলে তো কথাই নেই। গিন্নির গরম মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে এক নিমেষেই। আপনাদের মধ্যে ক’জনের হাতে গৃহিণীর মান ভাঙানোর এমন জাদুকাঠির সন্ধান আছে বলুন দেখি!