‘পড়াশোনা করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’- ছোট থেকে এই আপ্তবাক্যটা শুনে বোধহয় কমবেশি সকলেই বড় হয়েছি আমরা। সত্যিই তো, চাকরি-বাকরি কিংবা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই তো বেশিরভাগ মানুষ পড়াশোনা করেন। ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশোনা ক’জনই বা করেন আজকাল! এ ব্যাপারে একজন ব্যক্তি কিন্তু একেবারেই ব্যতিক্রম। একের পর এক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে গিয়েছেন তিনি। অর্জন করেছেন ডিগ্রিও। সব মিলিয়ে এক জীবনে ২০টি ডিগ্রির অধিকারী তিনি।
মনের জোর আর একাগ্রতা। এই দুটো না থাকলে বোধহয় কোনও ক্ষেত্রেই সফল হওয়া সম্ভব নয়। তবে সেসব থাকলেও বোধহয় কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হত না। আর সেখানেই ব্যতিক্রম এই মানুষটি। তিনি শ্রীকান্ত জিচকর। ভারতের সব চেয়ে বেশি ডিগ্রিধারী ব্যাক্তি। ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রকম পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি এক জীবনে। চিকিৎসাবিজ্ঞান, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ব্যবসা, প্রশাসন, সাংবাদিকতা- কী নেই সেই তালিকায়! সব মিলিয়ে মোট ২০টি ডিগ্রি জমা হয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এর মধ্যে ১১টি ডিগ্রিই স্নাতকোত্তর স্তরের। আর সেই ডিগ্রির কারণেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের রেকর্ড বুক লিমকা বুক অব রেকর্ডস-এর পাতায়।
আরও শুনুন: সময় কাটছে না, সাড়ে সাত কোটির পেন্টিংয়ে পেন দিয়ে চোখ আঁকলেন নিরাপত্তারক্ষী
শ্রীকান্তের জন্ম ১৯৫৪ সালে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোট ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বসেছেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হবেন। সেই মতো কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়েই। এমবিবিএস পাশ করার পরে সফলভাবে এমডি শেষ করলেন শ্রীকান্ত। তবে পড়াশোনা শেষ হল না। এর পরে পা রাখলেন আইনের শাখায়। সেখানেও সাফল্য এল একই ভাবে। এলএলবি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে ঢুকলেন তিনি। চিকিৎসকের পাশাপাশি সফল উকিলের ডিগ্রিও এল ঝুলিতে।
কিন্তু পড়াশোনা থামালেন না। বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা পড়তে শুরু করলেন তিনি। পাশাপাশি করে ফেললেন এমবিএ।
আরও শুনুন: শ্রবণশক্তি নেই, দাঁত তো আছে! অদ্ভুত কায়দায় পিয়ানোর শব্দ শুনতেন বধির বেঠোভেন
চিকিৎসা হল, আইন হল, ব্যবসাও হল। ভাবছেন নিশ্চয়ই, এবার তবে কী? এত সব ডিগ্রি ঝুলিতে নিয়ে এবার সাংবাদিকতা পড়তে ঢুকলেন তিনি। সেখানেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেন।
সব মিলিয়ে তাঁর স্নাতক ডিগ্রিই রয়েছে মোট দশটি বিষয়ে। স্নাতকোত্তরের তালিকা শুনলে তো অবাকই হতে হয়। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সোশিওলজি বা সমাজবিদ্যা, ইকোনমিক্স, সংস্কৃত, ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস-সংস্কৃতি ও পুরাতত্ত্ব এবং মনোবিদ্যা বা সাইকোলজি – এই সব কটি বিষয়েই স্নাতকোত্তর অর্জন করেছেন এই ব্যক্তি। এই প্রত্যেকটি বিষয়ই তিনি পাশ করেছেন প্রথম শ্রেণিতে।
এই বিপুল পড়াশোনাকে কর্মজীবনে কাজেও লাগিয়েছেন তিনি। চিকিৎসক ও আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন অল্প কয়েকদিন। পুলিশের চাকরি করার সাধও হয়েছিল একসময়। বসে যান ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস পরীক্ষাতে। সফল হন সেখানেও। ১৯৭৮ সালে চাকরি পান পুলিশে। দুবছর চুটিয়ে কাজ করেন সেখানে। তার পর আবার বদলে যায় সাধ।
পুলিশের চাকরি ছেড়ে ১৯৮০ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের পরীক্ষায় বসেন শ্রীকান্ত। সফল হয়ে চাকরিতেও ঢুকলেন। তবে সে চাকরির মেয়াদ ছিল মাত্র চার মাস।
পড়াশোনার সব কটা ক্ষেত্র ছুঁয়ে দেখে এসেছেন শ্রীকান্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও রাজনীতি নিয়ে বিশেষ এগোনো হয়নি তাঁর। এবার পড়লেন সেই বিষয়টি নিয়েই। রাজনীতির ময়দানে নামলেন তিনি। কংগ্রেসের হয়ে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে দাঁড়ালেন শ্রীকান্ত। প্রত্যাশিত ভাবেই জয় এল। এমএলএ হলেন শ্রীকান্ত। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হওয়ারও রেকর্ড জমল তাঁর ঝুলিতে।
ভাবছেন নিশ্চয়ই গল্প শেষ! না, গল্পের বাকি আছে আরও। শুধু বিধায়ক হয়েই থামলেন না শ্রীকান্ত। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে বিধায়ক পদে থাকার পর ১৯৮৬-তে মহারাষ্ট্রের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হন তিনি। প্রাথমিক ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকলেও একসঙ্গে ১৪টা মন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন একই সময়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত করেছেন সেই কাজ। ১৯৯২ সালে ভোটে জিতে রাজ্যসভায় যান শ্রীকান্ত। চার বছর রাজ্যসভার সদস্যপদও সামলান সমান দক্ষতার সঙ্গে।
সব মিলিয়ে শ্রীকান্তর জীবন ও কেরিয়ারকে বিস্ময় বললেও কম বলা হবে। কোনও রক্তমাংসের মানুষ যে এত পড়াশোনা এক জীবনে করতে পারেন, তা কল্পনা করাও বোধহয় দুঃসাধ্য। আজ অবধি বোধহয় শ্রীকান্তর এই অভাবনীয় রেকর্ড ভাঙতে পারেননি আর কেউই।