সান্তা শুধু ছোটদের? তা কেন হবে? বড়রাও চাইলেই উপহার চাইতে পারেন! কিন্তু চাইবেন টা কী? সম্প্রতি, সেই হদিশ পেতেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিজেদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বড়রাও! কে, কী চাইলেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ছেড়ে ফেলে ছুড়ে ফেলা। মোজার তো এই-ই নিয়তি। সেই মোজাকেই যেন সাদরে কাছে টেনে নেওয়ার দিন, বড়দিন। সবাই ছোটো থেকে গল্পে গল্পে এটাই শুনে এসেছি যে, বুড়ো সান্তা ক্লজ রাতের বেলায় এসে চুপি চুপি নিজের ঝুলি থেকে সুন্দর সুন্দর উপহার রেখে যান আমাদের জন্যে। আর সেই জন্যই সাজিয়ে রাখা মোজা। একটু বড় হলে অবশ্য এ রূপকথা মিলিয়ে যায়। আমরা বুঝতে পারি, আসলে সান্তা নন, বাড়ির বড়রাই আদর করে মোজার ভিতর রেখে দেন উপহার। সে যাই হোক, এই রূপকথায় বিশ্বাস করে বাচ্চারা কত না গোপন ইচ্ছে জানায় সান্তাকে। যে কথা হয়তো বাড়ির বড়কেও তারা বলে না। বড়রাও সান্তাকে লেখা ছোটদের চিঠি থেকেই খোঁজ পান বাড়ির খুদেটির মনের ঠিকানা। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি যে, এই বাচ্চারা যখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে ওঠে তখনও কি তারা গোপনে কিছু চায়? আর সে কথা জানায় সান্তাকে? সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বড়দের বায়নাও কিন্তু কম নয়। সান্তা মেটাতে পারুন বা না পারুন, সান্তাকে জানাতে ক্ষতি কী? আর তাই বড়রাও কিছু কিছু কথা সান্তাকে জানায় বইকি!
কীরকম সে সব ইচ্ছে? এই ইচ্ছের তালিকায় প্রথমেই আছে ট্র্যাফিক ধারণাটিকে দুনিয়া থেকে মুছে দেওয়ার কথা। কারণ দৈনন্দিন জীবনে অফিসগামী মানুষজন কিংবা অন্যান্যরাও যেভাবে ট্র্যাফিক জ্যামে ফেঁসে ঘেমে-নেয়ে একশা হয়ে ওঠেন, তা যেমন কষ্টকর ক্লান্তিকর। আর সময়ের হিসাবও গোলমাল হয়ে যায় ওই জ্যামে আটকে। আর তাই এই ট্রাফিকের ধারণাটিকে যদি এই দুনিয়া থেকেই সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা যায় তাহলে বেশিরভাগ মানুষই অনায়াসে সময়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। তাই অনেকেই সান্তার কাছে একটিই জিনিস চান, তা হল ট্রাফিক থেকে মুক্তি। বলা বাহুল্য তাতে ঝামেলা আরও বাড়বে। সান্তা তাই আদৌ এ বিষয়ে মনোযোগী হবেন কিনা, সে সন্দেহ থেকেই যায়।
তবে, সান্তা যে দেবেন না জেনেই তো বড়দের বায়না। তাই অনেকের ইচ্ছে পাকাপাকি ভাবে পাহাড়ে চলে যাওয়া। অন্তত কাজের জায়গাটি যেন পাহাড়ি এলাকায় হয়। এই কংক্রিটের ধুলো-শহর পেরিয়ে নির্জন পাহাড়ি এলাকায় কে না যেতে চায়! তবে চাইলেই কি আর যাওয়া যায়! সেই উপায় নেই বলেই সান্তার কাছে এই আরজি। এখানেই শেষ নয়। সান্তার কাছে কেউ কেউ মহার্ঘ জিনিসও চেয়ে বসেন। যেমন, কোল্ড-প্লে কনসার্টের টিকিট। ব্রিটিশ কোল্ড-প্লে ব্যান্ডের কথা নেটিজেনদের অজানা নয়। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে একবার হলেও অন্তত জীবনে এই কনসার্টের সাক্ষী থাকা! কিন্তু পকেটে অত রেস্ত কোথায়! মূল্যবৃদ্ধির যে হার তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। সেখানে বিনোদনের জন্য এত টাকা আর কেই-বা খরচ করতে পারে! অতএব সান্তা যদি সহায় হন, তাহলে তো কথাই নেই। কেউ কেউ আবার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান। জীবনে বিনোদন, বিলাসও থাকবে; আবার সচ্ছলতাও। তাহলে, এক কোটি টাকা চাইলেই কেল্লাফতে। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন শোনা কথা বটে, তবে সান্তা গৌরী সেন কি-না আমাদের জানা নেই।
আসলে ছাপোষা এই জীবনে অপ্রাপ্তি তো কম নয়! আর যে আর্থ-সামাজিক পরিবেশে আমরা থাকি, তাতে আমরা জানি যে, চাইলেই অব ইচ্ছে পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই বোধহয় সান্তার কাছে যাওয়া। ছোটবেলায় যা রূপকথা, বড়বেলায় তা নিশ্চিতই নয়; তবু ঘিসাপিটা জীবনে সান্তা যদি দু’দণ্ডের স্বস্তি দেয়, অন্তত ইচ্ছেটুকু তাঁর কাছে জানানো যায়, তাই-ই বা মন্দ কী!