চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়…। সান্তা ক্লজেরও যায়নি। এখন আমরা সান্তাকে যেমন লাল জামায় নাদুসনুদুস দেখি, আগাগোড়া কিন্তু তিনি তেমন ছিলেন না। বরং ছিলেন রোগাসোগা, পরনে সবুজ পোশাক। তাহলে সান্তা বদলে গেলেন কীভাবে? আসুন সেই গল্পই শুনে নিই।
একমুখ দাড়ি-গোঁফ। তারই ফাঁকে ঝলমল করছে শিশুর মতো সরল হাসি। বেজায় মোটা, পরনে লাল টুকুটুকে পোশাক। এটুকু বললেই বোঝা যায়, কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, ঠিকই যে, এই ছবি মানে যে সান্তা ক্লজেরই বর্ণনা, তা বুঝতে আমাদের সময় লাগে না। কিন্তু যদি এরকম বলা হয় যে, একইরকম একজন মানুষ। দাড়িভরা মুখে শিশুর সারল্য। তবে নাদুসনুদুস নন। মধ্যপ্রদেশ মোটেও বাড়েনি। বরং বেশ রোগাপাতলা-ই। আর পরনেবাদামি কিংবা সবুজ পোশাক। তাহলেও কি চোখের সামনে সান্তার ছবিই ভেসে আসে? না, আসে না বটে, তবে এক কালে সান্তার চেহারা ও পোশাক ছিল এরকমই। তাহলে কালে কালে তা বদলাল কীভাবে? বলা যায়, ‘কোকা-কোলা’র দৌলতেই বদল এসেছে সান্তার চেহারায়। তবে না, শুধু ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিই নয়, নেপথ্যে আছেন আরও একজন মানুষ। তিনি প্রখ্যাত কার্টুনশিল্পী থমাস নাস্ট। মূলত তাঁর কল্পনার হাত ধরেই বদলে গিয়েছেন সান্তা।
আরও শুনুন: ‘মেরি ক্রিসমাস’ বললেই কারাবাস! কোন দেশে জারি এমন আইন?
সে কথায় যাওয়ার আগে, বিতর্কের কথাটা শুনে নেওয়া যাক। ক্রিসমাস উপলক্ষে তো শপিংমলগুলিতে মোটাসোটা সান্তার ভিড়। এতেই আপত্তি জানিয়েছেন এক গবেষক। অস্ট্রেলিয়ার ওই গবেষক স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তাঁর মতে, এই চেহারার সান্তা তো আসলে হাবিজাবি খাওয়া-দাওয়াকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে। তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। আবার যেই না তিনি সান্তাকে মোটা বলেছেন, আর-একদল মানুষ তাঁর সমালোচনা করেছেন। সান্তাকে চেহারা নিয়ে খোঁটা দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ বডিশেমিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। এই আবহেই সকলে খুঁজে দেখতে বসেছেন যে, সান্তা কি চিরকাল মোটাই ছিল? নাকি চেহারায় বদল হয়েছে? আর সেই সূত্রেই ফিরে এসেছে ‘কোকা-কোলা’ ও থমাস নাস্টের কথা।
আরও শুনুন: গোপনে উপহার দিতেন শিশুদের, ঘটাতেন অলৌকিক ঘটনা… সান্তা ক্লজ কি আসলে ইনিই?
দেখা যাচ্ছে যে, সান্তার আজকের মোটাসোটা চেহারার জন্য ঠান্ডা পানীয় ‘কোকা-কোলা’র বিজ্ঞাপন অনেকাংশেই দায়ী। পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থার লক্ষ্য ছিল যে, তা যেন কেবল গরম কালের পানীয় হিসাবে বিবেচিত না হয়। অতএব সান্তার হাতেও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘কোকা-কোলা’র গ্লাস। আর সেই সান্তার পরনের পোশাক লাল, চেহারাও একটু ভারিক্কি গোছের। সেটা ১৯৩১ সালের কথা। এই বিজ্ঞাপন মানুষের মনে এমন ছবি তৈরি করল যে, সান্তার চেহারা ও পোশাকই কালক্রমে গেল বদলে। কিন্তু শুধু এই বিজ্ঞাপন নয়, বরং সান্তার ভোলবদলটি আসলে ঘটিয়েছিলেন কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট। আমেরিকান কার্টুনের জনক বলা হয় তাঁকে। তিনিই প্রথম সান্তাকে লাল রঙের পোশাকে কল্পনা করেন। সান্তাকে সবুজ পোশাকও পরিয়েছিলেন তিনি। সান্তার চেহারা যে একটু নাদুসনুদুস পেটমোটা ধরনের হতে পারে, তা-ও তাঁরই কল্পনা। বলা যায়, তাঁর কার্টুন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই বিজ্ঞাপনটি সান্তাকে নতুন ভাবে তুলে ধরেছিল। তারপর, সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। এখন রোগাসোগা বাদামি পোশাকের সান্তাকে আর চিনতেই পারেন না মানুষ।
আরও শুনুন: বড়দিনেই কি জন্ম হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের? রয়েছে অন্য মতও
সান্তা আসলে কে ছিলেন, তা নিয়েও আছে বহু গল্প। বহু গল্পকথা মিলিয়ে-মিশিয়েই বিশ্ব জুড়ে সান্তা বেশ আদরের এবং মজার একটি চরিত্র। সান্তার চেহারা আর পোশাক বদলের গল্পটাও কিন্তু একইরকম মজাদার।