গালিভার্স ট্রাভেলস-এর গল্প তো জানেন অনেকেই। সে গল্পে অভিযানে বেরিয়ে লিলিপুটদের দেশে পৌঁছে গিয়েছিল গালিভার। সেই দেশের অস্তিত্ব কি রয়েছে কেবল গল্পেই? নাকি বাস্তব দুনিয়াতেও মেলে তাদের খোঁজ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে শেষমেশ পৌঁছানো গিয়েছিল এমন এক দেশে, যেখানে সব মানুষের গড় উচ্চতা মোটে ইঞ্চি ছয়েক। সমুদ্রে ভেসে আসা মানুষটিকে তারা প্রায় দৈত্য-ই ভেবে বসেছিল। এদিকে সেই ছ-ইঞ্চি মানুষদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নগর পরিকল্পনা আর কারিগরি বিদ্যার নমুনা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল ওই সুসভ্য ব্রিটিশ নাগরিকের। গালিভার্স ট্রাভেলস-এর গল্পে এমনটাই জানিয়েছিলেন লেখক জোনাথন সুইফট। তবে গল্প তো গল্পই। এই খুদে মানুষ আর তাদের এলাকা রয়েছে গল্পের আওতাতেই। অন্তত তেমনটাই জানতাম আমরা। কিন্তু যদি জানা যায়, সত্যিই এই পৃথিবীতেই রয়েছে এমন মানুষের সাকিন, কেমন লাগবে তাহলে?
আরও শুনুন: আজব কাণ্ড! টেমস পারের লন্ডন নকল হয়ে উঠে এল চিনে! ব্যাপারটা কী?
হ্যাঁ, আজগুবি কল্পনা নয়, সত্যিই এই দুনিয়ায় রয়েছে লিলিপুটদের গ্রাম। গ্রাম-ই। আরেক কল্পিত নাবিক সিন্দবাদের গল্প লিখেছিল যে দেশ, সেই পারস্য তথা ইরানে এই গ্রামটির ভৌগোলিক ঠিকানা। আফগানিস্তানের সীমানা ঘেঁষে, পূর্ব ইরানে অবস্থিত এই মাখুনিক গ্রাম। গালিভারের গল্পের মতো ১৫ সেন্টিমিটার মানুষের হদিশ না মিললেও, এখানে ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতার মানুষের খোঁজ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৫ সালে এই উচ্চতার একটি মমি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এই গ্রামে। তল্লাশি চালিয়ে পরে ৮০০টি কবরের সন্ধান মেলে, যেগুলির দৈর্ঘ্য অত্যন্ত কম। কবরগুলি খুঁড়ে যেসব দেহাংশ বা কঙ্কালের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তা থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই গ্রামবাসীদের গড় উচ্চতা আদৌ ৩ ফুটের বেশি ছিল না। ওই গ্রামের বাড়িগুলির উচ্চতা এবং আকারও তাঁদের এই মতকে মান্যতা দেয়।
আরও শুনুন: তিনি মেয়র, তিনিই নাগরিক… আশ্চর্য এই শহরের বাসিন্দা মাত্র একজনই
গবেষকদের মতে, গ্রামটির বয়স অন্তত দেড়হাজার বছর। গ্রামে এখনও মানুষের বসবাস রয়েছে, যদিও তাঁদের উচ্চতা আর পূর্বপুরুষদের মতো অত কম নয়। ১৯৪৬ সালে বাইরের দুনিয়ার কাছে এই গ্রামের অস্তিত্ব জানাজানি হওয়ার পর জীবনযাত্রাও পালটেছে কিছুটা। তবে বাড়িঘরগুলির চেহারা বিশেষ পালটায়নি। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট বাড়ি বানিয়েই সেখানে থাকেন মাখুনিক গ্রামের মানুষ। পাহাড়ি অঞ্চলের রুক্ষতা এবং দুর্গমতার কারণে খাবারদাবারের অপ্রতুলতা ছিলই, আর সেই অপুষ্টির কারণেই এই গ্রামে বামন আকৃতির মানুষদের জন্ম হয়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শারীরিক উচ্চতা কম হওয়ার পিছনে যতই বৈজ্ঞানিক যুক্তি থাকুক, সাহিত্যিকের কল্পনাকে বাস্তবে সত্যি হতে দেখার চমক তাকে হারিয়ে দেয় কোথাও। তাই গালিভারের গল্পে পড়া লিলিপুটদের দুনিয়ার আখ্যা নিয়েই রয়ে গিয়েছে মাখুনিক গ্রাম।