দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ একদিকে দেখেছিল মানুষের অপরিমিত নিষ্ঠুরতা। আরেকদিকে সেই যুদ্ধের আবহেই অভূতপূর্ব মানবিকতারও নজির রেখেছিলেন অনেক মানুষ। তেমনই একজন মহিলা, নাৎসিদের হত্যালীলার মধ্যেই প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন প্রায় ৮০০০ শিশুকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই বীরাঙ্গনার গল্প।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে তাঁকেই মা বলে মনে করত হাজার হাজার শিশু। তারা জানত তিনি তাদের জন্ম দেননি। কিন্তু তারা এ কথাও জানত, তিনি তাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই তাদের কাছে এই মহিলাই ছিলেন তাদের ‘দ্বিতীয় মা’। আর এই ভালবাসাই তাঁর পাওয়া সবচেয়ে বড় পুরস্কার, মনে করতেন ডায়ানা বুডিসাজেভিক।
আরও শুনুন: স্ত্রীকে কাছে রাখার দিশা দেখাল রিভলবার! বিশ্বযুদ্ধের ঘরছাড়া সেনাদের প্রিয় ছিল ‘সুইটহার্ট গ্রিপস’
কে ছিলেন এই মহিলা? আর ঠিক কী করেছিলেন তিনি? সে উত্তর লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই অভিশপ্ত দিনগুলিতে।
আরও শুনুন: হার মেনেছিল যুদ্ধ, নাৎসি বন্দিশিবিরের প্রেমের গল্প বিস্মিত করে পৃথিবীকে
ক্ষমতা দখলের নেশায় উন্মত্ত জার্মানি হাত মিলিয়েছিল ইতালি আর জাপানের সঙ্গে। বিশ্ব জুড়ে দখলদারি চালাবে তারা, এই ছিল লক্ষ্য। পালটা আক্রমণ হেনেছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি। সব মিলিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু রাজায় রাজায় লড়াই আর পালটা লড়াইয়ের এই জাঁতাকলে পড়ে পিষে যাচ্ছিল সাধারণ মানুষ। এমনকি রেহাই পায়নি শিশুরাও। আর এমন যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের বাঁচাতেই এগিয়ে এসেছিলেন ডায়ানা। তিনি আদতে ক্রোয়েশিয়ার মানুষ। সার্বিয়ার কিছু অংশ এবং ক্রোয়েশিয়া নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রটি তখন নামেই স্বাধীন, আদতে সেখানে ছড়ি ঘোরায় জার্মানির নাৎসি সরকারই। আর সেইজন্যই, বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন প্রচুর অস্ত্রের প্রয়োজন, তখন অস্ত্র কারখানার শ্রমিক জোগাড় করতে এই দেশটির দিকে নজর দিল জার্মানি। ক্রোয়েশিয়া থেকে সুস্থ নারী-পুরুষদের বন্দি করে জার্মানিতে নিয়ে আসতে শুরু করল নাৎসি বাহিনী। এদিকে তাদের সন্তানরা রয়ে গেল ক্রোয়েশিয়াতেই। কয়েকটি হোমে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু সেগুলির হাল ইহুদিদের কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পের মতোই জঘন্য ছিল। ফলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগল। তাদের চিকিৎসারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতেই একদিন ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড়ো শহর জ্যাগ্রেবের এক হাসপাতালে ঢুকেছিলেন ডায়ানা। দেখলেন হাসপাতালের মেঝেতে স্রেফ পড়ে রয়েছে শয়ে শয়ে অসুস্থ শিশু। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারাও গিয়েছে। এক চিকিৎসকের স্ত্রী ডায়ানা সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলেন, এই অনাথ শিশুদের বাঁচাতে যা যা করার দরকার, একাই করবেন তিনি।
শুনে নিন বাকি অংশ।