টাকা নয়। ফুল, মালা কিংবা কোনও প্রসাদও নয়। এই মন্দিরে প্রণামী হিসেবে দেওয়া হোয় স্যানিটারি ন্যাপকিন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। আমাদের দেশে রয়েছে এমনও এক মন্দির, যেখানে এমনই নিয়ম রয়েছে। কোথায় সেই মন্দির জানেন? আসুন শুনে নিই।
আমাদের দেশে মন্দিরের অভাব নেই। সেইসব মন্দির ঘিরে রহস্যেরও কমতি নেই। কোথাও আমিষ ভোগ, কোথাও প্রসাদ হিসেবে মদ। কোথাও আবার আরাধ্যকে সোনা রুপো দেওয়ার চল। তবে এই মন্দির গোটা দেশের মধ্যে বিরল। বলা বাহুল্য, গোটা বিশ্বে এই মন্দির বিরলতম। এখানে প্রণামী হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার চল।
আরও শুনুন: না খেয়ে ৩৮২ দিন, এক ধাক্কায় ব্যক্তির ওজন কমেছিল ১২৫ কিলো…তারপর?
কথা বলছি মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত অন্নপূর্ণা মন্দির সম্পর্কে। মন্দিরটি ভোপালে। কাশীর অন্নপূর্ণা মন্দিরের মতো এখানেও ভক্তরা নিয়মিত পুজো দিতে হাজির হন। তবে সেখানে ফুলের মালা কিংবা প্রসাদি মিষ্টির বদলে ভক্তরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট হাতে হাজির হন। সেসব নিয়ে মন্দিরের কারও কোনও ছুঁতমার্গ নেই। বরং দেবী মূর্তির সামনেই সেইসব প্যাকেট রাখা হয়। শুধু তাই নয়, অনেকে মেন্সট্রুয়াল কাপও দান করেন এই মন্দিরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব দিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ ঠিক কী করে?
আরও শুনুন: সংস্কৃত মন্ত্রে গাড়ি পুজো করছেন আফ্রিকান ‘পুরোহিত’! ব্যাপারটা কী?
এখানেই সামনে আসে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম। মন্দিরে দান হিসেবে জমা পড়া সমস্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন চলে যায় ভোপালের এক এনজিও-র জিম্মায়। তাঁরাই দায়িত্ব নিয়ে বাকি কাজ সারেন। নিয়মিত সেইসব বিলি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের মধ্যে। বিশেষত যাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সামর্থ নেই তাঁদের সকলকেই বিনামূল্যে অন্নপূর্ণা মন্দিরের অভিনব প্রসাদ বিলি করা হয়। সংস্থার কর্ণধার দীপাঞ্জন মুখার্জির কথায়, এমন অভিনব ভাবনার নেপথ্যে রয়েছে আসামের কামাখ্যা মন্দির। সেখানে প্রতি বছর দেবীর ঋতুমতী অবস্থাকে উদযাপন করা হয়। সেখান থেকে তাঁর মনে হয়, দেবীর পুজোর অন্যতম অঙ্গ হতে পারে স্যানিটারি ন্যাপকিন। এরপর তিনি গবেষণা করে দেখেন, আমাদের এমন মহিলার সংখ্যা নেহাতই কম নয়, যাঁদের প্রতি মাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সামর্থ নেই। যার জেরে তাঁদের অনেকেই নানা যৌনরোগে ভোগেন। এরপরই মন্দিরে প্রণামী হিসেবে এমন অভিনব ব্যবস্থা চালু হয়। সংস্থার তরফেই দায়িত্ব নিয়ে, বিভিন্ন সরকারি স্কুল বা বস্তি এলাকায় ওই স্যানিটারি ন্যাপকিন দান করা হয়। শুধু তাই নয়, মন্দিরে আরও দুই বিশেষ দানের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে অন্নদান, এক্ষেত্রে ভক্তরা মন্দিরে চাল,ডাল জাতীয় খাদ্য সামগ্রী দান করতে পারেন। এরপর রয়েছে বিদ্যাদান। যেখানে পড়াশোনা সংক্রান্ত জিনিসপত্র, যেমন বইখাতা, পেন, পেন্সিল এইসব দান করা যেতে পারে। আর শেষে আরোগ্য দান। এক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ দান করা নিয়ম। এই সবই একটা সময়ের পরে গরীবদের মধ্যে দান করে দেওয়া হয়। আসলে দেবী অন্নপূর্ণাও ভক্তদের সবরকম স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করার আশীর্বাদ দেন। তাই তাঁর মন্দিরে এমন রেওয়াজ থাকবে তা বলাই বাহুল্য। শুধু ভক্তির টানে নয়, দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই এই মন্দিরে ছুটে আসেন স্রেফ দান করার উদ্দেশ্য নিয়ে। কারও সামান্য দানে যদি একটা জীবন বাঁচে, তবে তার থেকে বড় আর কিছু হয় না বলেই মনে করে মন্দিরের সদস্যরা।