যতই আস্তে ধীরে চলুক, কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ির প্রতি এক নস্টালজিয়া রয়েই গিয়েছে আমাদের। আর রেলপথের যাত্রায় ট্রেন যেমন আকর্ষণের, চেনা অচেনা স্টেশনের আকর্ষণও কিন্তু কম নয়। এক একটা স্টেশনের নাম মানেই যেন এক একটা আস্ত গল্প। শুনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু স্টেশনের কথা।
স্টেশনের নাম, নাকি পরিবারের সদস্য? বলা মুশকিল। কারণ স্টেশনের বোর্ডে যে নামগুলি দেখা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে ট্রেন বা ট্রেন সংক্রান্ত কোনও কিছুরই সম্পর্ক নেই কোথাও। বরং তারা প্রত্যেকেই নির্দেশ করছে কোনও না কোনও পারিবারিক সম্পর্ককে। বাবা, ঠাকুরদা, স্ত্রী, শ্যালিকা, কে নেই সেই সব নামের তালিকায়! এমনিতেই ভারতে যে কতরকম আজব নামের রেলস্টেশন আছে, তার ইয়ত্তা নেই। তবে এই নামগুলি যেন সবকিছুকেই হার মানায়। দেখে মনে হয়, এমনও নাম হতে পারে! তা হতে যে পারে, সে তো দেখাই যাচ্ছে। আসুন, শুনেই নেওয়া যাক এই পারিবারিক স্টেশনগুলির কথা।
আরও শুনুন: অপরাধী নেই বললেই চলে! পড়শি মুলুক থেকে অপরাধী আসুক জেলে, চায় এই দেশ
পরিবারের কর্তা বলে যাঁকে মানা হয়ে থাকে, এই পারিবারিক স্টেশনের দলে তিনি থাকবেন না সে কি হয়? রাজস্থানের যোধপুরের কাছে একটি স্টেশনের নাম ‘বাপ’। আর বাবা একা নন, আছেন তাঁরও বাবা, অর্থাৎ ঠাকুরদা। বাপ ঠাকুরদা দুজনেরই অবস্থান রাজস্থানে। উদয়পুরের কাছে সিরোহী পিণ্ডওয়াড়ায় রয়েছে ‘নানা’ স্টেশন। আবার যোধপুর ও জয়সলমিরের মাঝে একটি হল্ট স্টেশনের নাম ‘ওধানিয়া চাচা’।
মা ঠাকুমাকে দেখা না গেলেও, এইসব আজব নামের স্টেশনের তালিকায় বউয়েরা দিব্যি জায়গা করে নিয়েছেন। একজন দুজন নন, গোটা একটা নগর। তেলেঙ্গানার ভবানীগড় জেলায় রয়েছে ‘বিবিনগর’ রেলস্টেশন। কিন্তু কেবল বউয়ের নামে স্টেশন থাকলে কি পুরুষেরা খুশি হবেন? যেখানে বিয়ের আগে মেনস পার্টির প্রচলিত ঠাট্টা, বউ তো আছেই, শ্যালিকাও নাকি আধি ঘরওয়ালি। তাই সেই কথা মাথায় রেখেই বোধহয় স্টেশনের নামকরণের সময় শ্যালিকাদেরও বাদ দেওয়া হয়নি। ‘সালি’ নামেই একটি স্টেশন রয়েছে এ দেশে। তার ঠিকানাও ফের রাজস্থান। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর ডিভিশনে রয়েছে এই স্টেশনটি। আর বিহারের চম্পারনে রয়েছে মেয়ের নামে স্টেশন, ‘বেটিয়া’।
আরও শুনুন: তাজমহল তো বটেই, ৫৪৫ জন সদস্য-সহ পার্লামেন্টটিকেও বেচে দিয়েছিলেন তিনি! জানেন কে এই ব্যক্তি?
সরাসরি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত না হলেও, বন্ধুরাও একরকমের পরিবার বইকি। স্টেশনের নামকরণের ক্ষেত্রেও সে কথা বলা চলে। মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদ জেলার অন্তর্গত নাগপুর ডিভিশনের একটি রেলস্টেশনের নাম ‘সহেলি’, অর্থাৎ বন্ধু। আর আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রেমিকের নামেই একটি স্টেশনের নাম রেখেছে হরিয়ানা। হরিয়ানার পানিপথ এলাকায় একটি রেলস্টেশনের নাম ‘দিওয়ানা’।
এহেন নামকরণের আড়ালে হয়তো লুকিয়ে রয়েছে কোনও না কোনও গল্প। তবে সে তো আড়ালের কথা। সামনে আসা নামগুলি দেখে কিন্তু অবাক না হয়ে উপায় নেই।