‘ধু ধু করে যেদিক পানে চাই, কোনওখানে জনমানব নাই’, সে সময় এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে! এমনটা ভাবাও কঠিন। যেদিকেই তাকাও শুধুই উঁচু উঁচু ইমারত। গ্রাম-শহর সর্বত্রই লোকের ভিড়। অবশ্য ১৪০ কোটির দেশে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভারতেই এমন কয়েকটা গ্রাম রয়েছে যেখানে জনমানবের চিহ্নমাত্র নেই। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
গ্রাম হোক বা শহর ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর পেলেও তার দাম আকাশছোঁয়া। একটু উন্নত শহর হলে তো কথাই নেই। যেখানে সুযোগ সুবিধা যত বেশি, সেখানে জায়গার দামও ততই বেশি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা মাথার গোঁজার আস্তানা গড়তে পেরেছেন। আর যাদের নেই, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে ফুটপাথ কিংবা গাছতলা। অনেকেই মনে করেন জনসংখ্যার তুলনায় থাকার জায়গা সেভাবে নেই। তাই এই সমস্যা। কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে এমন কিছু গ্রাম যেখানে এখনও কেউ বাস করেন না।
আরও শুনুন: ক্ষুদ্রতম, তাতে কী! বাধা উড়িয়ে সারা দুনিয়া সফর করেন সাড়ে ২৯ ইঞ্চি উচ্চতার ব্যক্তি
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। হরিয়ানার চার গ্রামে জনসংখ্যা শূন্য। স্বাধীনতার পর এত বছর কেটে গেলেও সেখানে কোনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি। সে রাজ্যের গুরগাঁও জেলায় অবস্থিত খোবরি, জালাল্পুর, পুলাওয়াস আর রোজকা গুরজার, এই চার গ্রামে স্থায়ীভাবে কেউ থাকেন না। সবমিলিয়ে মোট ১০০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই চার গ্রাম। যেখানে না আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা, না আছে ইলেক্ট্রিসিটি। আধুনিক সমাজে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন তার প্রায় কিছু নেই এই গ্রামে। তাহলে এই গ্রামগুলো রয়েছে কেন?
আরও শুনুন: প্রাণ বাঁচাল কাঁচা মাছ, মাঝসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার দু’মাস পর বেঁচে ফিরলেন ব্যক্তি
মূলত চাষের জন্যই এই গ্রামগুলোকে ব্যবহার করা হয়। তাই অন্যান্য গ্রামের মতো কোনও স্থায়ী বসতি এখানে নেই। আশেপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এখানে আসেন স্রেফ ঘাস সংগ্রহের জন্য। কেউ কেউ গবাদি পশু চড়াতেও নিয়ে আসেন এখানে। তবে সবকিছুই হয় দিনের বেলায়। সূর্য অস্ত গেলে এখানে কারও দেখা মেলা ভার। ঠিক কেন সন্ধ্যের পর এখানে কেউ থাকতে চান না, তা নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। তবে সন্ধ্যের পর এই আলোহীন গ্রামে থাকা এমনিতেই বেশ কঠিন ব্যাপার। তার ওপর ঠিকমতো রাস্তাঘাট না থাকায়, এখান থেকে ফেরাও খুব সহজ নয়। তাই সকলেই দিনের আলো থাকতে থাকতে এখান থেকে বেরিয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে ভুতের গল্প তো রয়েছেই। কেউ কেউ মনে করেন এই গ্রামগুলিতে কোনও অপদেবতার অভিশাপ রয়েছে। তবে এর সবই লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি মাত্র। প্রথম থেকেই এই গ্রামগুলিকে চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। আজও সেই ছবি বদলায়নি।