‘ইয়ারো দোস্তি বড়ে হি…’ – এ গান যিনি শুনিয়েছিলেন, সেই কেকে আর নেই। কিন্তু তাঁর গান আর গানের ভিতরকার যে বন্ধুতার মায়ময় আবেদন, তা কখনও ফিকে হয় না। বন্ধুদের মুখে মুখে তাই ফেরে এই গান। আর এমন এমন ঘটনা ঘটতে থাকে, যা দেখে নতুন করে মনে পড়ে যায়, সত্যিই বন্ধুত্বের থেকে ভাল সম্পর্ক আর কিছু হয় না। আসুন শুনে নিই সেরকমই এক বন্ধুত্বের কাহিনি।
ব্যক্তিগত দুঃখতাপ তো থাকেই। সেসবের মাঝখানে কখন যে উপশম হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বন্ধুরা, তা বোঝাই যায় না। স্কুলবেলায় টিফিন ভাগ দিয়ে শুরু হওয়া সমস্ত গল্পরা একদিন কীভাবে যেন জীবনের সুখদুঃখ ভাগ করে নিতেও শিখে ফেলে। যেমন পেরেছে এই সব খুদেরা। সদ্য মা হারানো প্রিয় বন্ধুর দুঃখে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সমস্ত সহপাঠীরা। মলম লাগিয়েছে বন্ধুর ক্ষতে।
আসলে পাশে দাঁড়াতে বোধহয় তেমন বড় কিছু লাগে না। খুব ছোট ছোট প্রচেষ্টাই যে একজনের কষ্টের দিনটাকে বদলে দিতে পারে আনন্দে, খুশিতে- সে ব্যাপারটাই ফের প্রমাণ করে দিয়েছে এইসব খুদের বন্ধুত্ব। কিছু দিন আগেই মাকে হারিয়েছে কিশোরটি। মায়ের মৃত্যুর পর এই তার প্রথম জন্মদিন। স্বাভাবিক ভাবেই মনটা বিশেষ ভাল ছিল না কিশোরের। তার উপরে মা চলে যাওয়ার পর থেকেই অর্থনৈতিক টানাটানির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। স্কুলের খরচ টানতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। ফলে শখ মেটানো তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রটুকু জোগার করে ওঠাও কষ্টকর হয়ে গিয়েছে তাদের জন্য।
আরও শুনুন: খেলনা বিমানের প্রেমে মশগুল তরুণী, তার গলাতেই দিতে চান মালা
তাই বলে জন্মদিনে একা একা মন খারাপ করে বসে থাকবে কিশোর, তা মোটেও মেনে নিতে পারেনি বন্ধুরা। তাই বন্ধুর মুখে হাসি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিল স্কুলের সহপাঠীরা। জন্মদিনের দিন মুখ ভার করা বন্ধুর হাতে তাঁরা তুলে দিয়েছিল একটি উপহারে ঠাসা ব্যাকপ্যাক? আর হ্যাঁ, সঙ্গে ‘হ্যাপি বার্থডে’ গান গাইতেও কিন্তু ভোলেনি তারা।
ঠিক কী কী ছিল সেই ব্যাগে? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে। তার চেয়ে বরং জিজ্ঞেস করুন, কী ছিল না? জামা থেকে জুতো, গ্লাভস থেকে মোজা, একের পর এক উপহারে ঠাসা ছিল সেই ব্যাগ। মা-হারা বন্ধুর জন্য নিজেদের টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে সেই সব উপহারের আয়োজন করেছিল তাঁর বন্ধুরা। প্রিয় বন্ধু যে রোজ রোজ একই জামা পরে স্কুলে আসছে, তা কি আর চোখে পড়েনি তাদের!
জন্মদিনে বন্ধুদের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে আনন্দ চেপে রাখতে পারেনি কিশোর। উপহারে পাওয়া সমস্ত জিনিস প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পরে ফেলেছে সে। স্বাভাবিক ভাবে সে সমস্ত জামাকাপড়ে তাকে মানিয়েছেও দারুণ। হবে নাই বা কেন, সে সমস্ত উপহারের মধ্যেই যে মিশে রয়েছে দারুণ সুন্দর মিষ্টি বন্ধুত্ব আর ভালবাসা। তাঁর দুঃখের দিনে এভাবে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেনি সেই কিশোর।
আরও শুনুন: মা কুকুরের স্নেহ-আদরেই দিব্যি বড় হচ্ছে তিনটি বাঘের বাচ্চা, দেখে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাটি কোথাকার তা জানা না গেলেও ইতিমধ্যেই তা দারুণ ভাবে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মা হারা বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে সহপাঠীদের এই উদ্যোগ দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি বহু নেটিজেনরাই।
কথায় বলে, বন্ধু চেনা যায় দুঃখের দিনেই। আর তেমনই দিনে এক ক্লাস বন্ধুদের পাশে পেয়েছে এই কিশোর। কে বলে, মানবিকতা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কে বলে, আজকের প্রজন্ম একে অপরের পাশে দাঁড়াতে জানে না। সে সমস্ত চলতি ধারণাকেই এক্কেবারে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে একদল খুদের কাজকর্ম। আর ওই যে বলে, বন্ধুরা পাশে থাকলে পৃথিবীতে সব সম্ভব। ঠিক যেমন কেকে তাঁর গানে বলে যান… ‘ইয়ে না হো তো কেয়া ফির বোলো ইয়ে জিন্দেগি হ্যায়…’