তাজমহল প্যালেস। সকলের কাছে পরিচিত তাজ হোটেল নামে। মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত হোটেলটিকে বর্তমানে শুধু ভারতবাসী নন, চেনেন বিশ্বের মানুষও। আর এরই নির্মাণের নেপথ্যে থেকে গিয়েছে একটা বদলা নেওয়ার গল্প। ভারতীয়দের করা ইংরেজদের অপমানের বদলা। আসুন শুনে নিই।
শুধু ব্যবসা নয়, গড়ে তুলতে হবে দেশকে। এমনটাই ব্রত ছিল জামশেদজি টাটা-র। তখন ভারত ব্রিটিশদের অধীনে। একদিকে যেমন দেশ স্বাধীন করার মন্ত্রে উদুদ্ধ দেশবাসী; তেমনই দেশীয় সম্পদ গড়ে তোলার কাজ নিয়েও দেশব্রতী হয়েছেন অনেকে। জামশেদজি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ঔপনিবেশিক ভারতে ভারতবাসীর সম্মান ছিল তলানিতেই। এ নিয়ে তো অজস্র ঘটনা আছে। দরিদ্র ভারতবাসী তো বটেই, এমনকী বাদ যেত না অভিজাত মহলও। তাঁদের জন্যও বরাদ্দ হত অপমান। সেই সময়কার হোটেলগুলির দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হত। প্রায় সব হোটেলেই লেখা থাকত, ভারতীয় ও কুকুরের প্রবেশ নিষিদ্ধ। শোনা যায়, এই অপমান একেবারেই বরদাস্ত করতে পারেননি জামশেদজি। সারা দেশবাসীর অপমানের জবাব দিতেই প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে গেলেই হতে পারে হাজতবাস! কোথায় এমন নিয়ম রয়েছে জানেন?
এর মধ্যেই ঘটে গেল আর-এক ঘটনা। সেই সময়কার বিখ্যাত ওয়াটসন হোটেলে নিমন্ত্রণ ছিল জামশেদজির। যথাসময়ে তিনি পৌঁছেও গেলেন। কিন্তু ঢুকতে দিলেন না ম্যানেজার। কারণ ওই একটাই। অভিজাত হোটেলে ইউরোপীয়ান ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ। সেদিন ফিরতে হয়েছিল জামশেদজিকে। আর পণ করেছিলেন, মুম্বইয়ের বুকে এমন এক হোটেল গড়ে তুলবেন যা হবে সকলের জন্য। যেখানে ভারতীয়দের আর অপমান সহ্য করতে হবে না।
আরও শুনুন: পর্ন দেখলেই জরিমানা নয় হাজতবাস! ফোনে আপনার কাছেও কি এসেছে হুমকি?
এই জেদ থেকেই একদিন গড়ে উঠল তাজ হোটেল। ১৮৯৮ সালে হোটেলের কাজ শুরু হয়। আর সকলের জন্য এ হোটেলের দরজা খুলে যায়, ১৯০২ সালের ডিসেম্বরে। তখনও ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’ হয়নি। একসময় নাবিকরা মুম্বইয়ের কূলে জাহাজ পৌঁছাতে তাজ হোটেলের দিকেই চোখ রাখতেন। এই হোটেলেই প্রথম বসেছিল জার্মান এলিভেটর, ছিল আমেরিকান কোম্পানির ফ্যান। আর কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন খোদ ইংরেজরাও।
তবে কেউ কেউ এই গল্পটি সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের বক্তব্য, এক বিখ্যাত সংবাদ্গোষ্ঠীর সম্পাদক জামশেদজির কাছে আবদার করেছিল, মুম্বই শহরের উপযোগী একটা হোটেল গড়ে তুলতে। যা মুম্বইয়ের পরিচয়পত্র হয়ে ওঠে। জামশেদজি সে অনুরোধ ফেরাননি। আর তাজ হোটেল শুধু মুম্বই নয়, গোটা দেশের কাছেই যে গৌরবের, তা বোধহয় বলাই যায়।