দেশ তখন পরাধীন। ‘কালো নেটিভ’ বলে এ দেশের মানুষদের দিকে যখন তখন অপমান ছুঁড়ে দেন সাদা চামড়ার সাহেবরা। সেই সময়েই ইংরেজদের অপমানের যথোচিত প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন এক রাজা। কোনোরকম বিপ্লবের পথে গিয়ে নয়, রাজকীয় কায়দাতেই সাহেবদের রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন তিনি। কীভাবে? আসুন, তবে শুনে নেওয়া যাক।
ভারতবর্ষের হাওয়ায় কান পাতলেই শোনা যায় রাজারাজড়াদের নিয়ে রংবাহারি গল্প। কেউ ঘোড়ার লেজে আতর মাখাচ্ছেন তো কেউ বিড়ালের বিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। দেশের শাসনক্ষমতা যখন পাকাপাকিভাবে চলে গেল ইংরেজের হাতে, তখন এঁদের আর আগের মতো ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি রইল না বটে, কিন্তু বিলাস-ব্যসনে এতটুকু ঘাটতি হয়নি তখনও। মেজাজটাই যে আসল রাজা, আর সেই মেজাজ কি হঠাৎ করে বদলে যায়! বিদেশি প্রভুদের চট করে না ঘাঁটালেও, ও পক্ষের কোনোরকম বদতমিজি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ফণা তুলত সেই রইসি মেজাজ। আর তেমনটাই ঘটেছিল সেই দিন। সাহেবদের উদ্ধত আচরণের যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন আলোয়ারের রাজা, মহারাজা জয় সিং।
আরও শুনুন: রুখে দিয়েছিলেন মহম্মদ ঘোরির জয়রথ, পৃথ্বীরাজই কি ভারতের শেষ হিন্দু শাসক?
সালটা ১৯২০। লন্ডনে বেড়াতে গিয়েছেন মহারাজা। মেফেয়ার অঞ্চলে একটি রোলস রয়েস-এর শোরুম দেখে সেখানে ঢুকেছিলেন তিনি। রোলস রয়েসের স্থান বরাবরই বিশ্বের সবচেয়ে দামি এবং বিলাসবহুল গাড়িগুলির প্রথম সারিতে। ফলে ধনী ও অভিজাত মানুষ ছাড়া সেকালে কেউ এই গাড়ি কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। সেখানে কালো চামড়ার এক ভারতীয়ের পক্ষে ওই গাড়ি কেনা সম্ভব, এমনটা ভাবতেও পারেনি শোরুমের কর্মচারীরা। উলটে রীতিমতো ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেই মহারাজাকে তাড়িয়ে দেয় তারা।
মহারাজা জয় সিং আদৌ এই অপমান হজম করার মতো লোক ছিলেন না। কিন্তু সংস্থায় কোনোরকম অভিযোগ জানানোর বদলে অভিনব কৌশলে পালটা জবাব দিলেন তিনি। পরদিন রাজকীয় বেশভূষায় সেজে ফের ওই শোরুমটিতে উপস্থিত হন তিনি। মালিককে নিজের পরিচয় দিতেই এবার যোগ্য অভ্যর্থনা পান। ওই শোরুমে থাকা মোট ৬টি রোলস রয়েস-ই কিনে ফেলেন রাজা।
আরও শুনুন: বিধর্মী আক্রমণে ধ্বংসপ্রায়, দেশের বহু মন্দির পুনর্নির্মাণের ব্রত নিয়েছিলেন রানি অহল্যাবাই
কিন্তু এরপরেই আসে চমক। গাড়িগুলি নিয়ে ভারতে ফিরে তাতে একদিনও নিজে চড়েননি রাজা জয় সিং। প্রতিটি গাড়িকে ময়লা তোলার কাজে ব্যবহার করার আদেশ দেন তিনি। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই রোলস রয়েস সংস্থার মাথায় হাত। তড়িঘড়ি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে রাজার কাছে ক্ষমা চায় কর্তৃপক্ষ। এমনই বিনামূল্যে তাঁকে আরও ছটি রোলস রয়েস পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। শেষমেশ রাজা জয় সিং রোলস রয়েস দিয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করানো বন্ধ করেন। হৃত সম্মান ফিরে পায় বিশ্ববিখ্যাত সংস্থাটিও।