ধনতেরাস। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের এই উৎসব এখন সারা দেশেই সাড়ম্বরে পালিত হয়। আর তাই এই সময়টায় সোনা-রূপো কেনাকাটার ধুম লেগে যায়। এই যে প্রথা, এর উৎপত্তির কারণ কী? আসুন শুনে নিই।
ধনতেরস কথাটি এসেছে ধন ত্রয়োদশী থেকে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ছাড়া, লক্ষ্মীদেবীর আরাধনার আর যে-সকল রীতি আছে, তার মধ্যে অন্যতম দীপান্বিতা লক্ষ্মীপূজা। অর্থাৎ, কালীপুজোর সময়ও লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। সেই উৎসবেরই ছায়া দেখা যায় ধনতেরাস পালনের মধ্যে। মনে করা হয়, কালীপুজোর আগে এই ত্রয়োদশীর দিন দেবী লক্ষ্মী এসে ভক্তদের ধনসম্পত্তি দান করে মনোবাসনা পূর্ণ করেন।
এই ধনতেরসের সঙ্গে তাই ব্যাপক ভাবে জড়িয়ে আছে সোনা-দানা কেনাকাটার বিষয়। এখন কথা হল, দেবী লক্ষ্মী যদি নিজেই এসে ধনদান করে থাকেন, তাহলে ভক্তরা সোনা কেনেন কেন? আসলে এর নেপথ্যে আছে এক পৌরাণিক কাহিনি। যে কাহিনি মধ্যে পাওয়া যায় বেহুলা-লখিন্দরের ছায়া। তবে এখানে কুশীলব রাজা হিমার ছেলে আর তার নব পরিণীতা স্ত্রী। প্রচলিত আছে যে, কোনও কারণে রাজপুত্র অভিশপ্ত হয়েছিল। সে এমন অভিশাপ যে, বিয়ের পর পরই সর্পদংশনে তার মৃত্যু হওয়ার কথা। একদিন যথানিয়মে রাজপুত্রের বিয়ে হল। এখন এই অভিশাপ খণ্ডানো যায় কী করে? সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তখন অনেক ভেবে একটি পরিকল্পনা করলেন। যেদিন রাতে মৃত্যর আসার কথা, সেদিন তিনি সারা ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখলেন। আর সেইসঙ্গে বাড়িতে যত সোনা ছিল সব এনে জড়ো করলেন তাঁদের ঘরে। এবার সারাটা রাত স্বামীর সঙ্গে বসে গল্প করলেন। গান গাইলেন। মৃত্যুর দেবতা সে রাতে সেই ঘরে এসে পৌঁছালেন ঠিকই। কিন্তু উজ্জ্বল আলোয় তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে গেল। তিনি সেই সোনার রাশির উপর বসে বসে নবদম্পতির গল্প শুনে ফিরে গেলেন সকালে। রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে গেল তাঁর স্ত্রীর বুদ্ধিমত্তার জোরে। আর সেই থেকেই শুরু হল ধনতেরাস উৎসব।
আরও শুনুন: নরবলি দিয়ে পুজো শেষ করেই হারে রে রে রে…, শুনে নিন বাংলার ডাকাত কালীর কাহিনি
আজকে যে রীতি মেনে সোনা কেনা হয়, তার নেপথ্যে আছে এই গল্পের ছায়া। আরও একটি সামাজিক দিকও আছে। যেহেতু ধন ত্রয়োদশীর সঙ্গে সৌভাগ্যের যোগ আছে, তাই সকল গৃহস্থই এ সময় মূল্যবান কিছু কেনাকাটার জন্য সঞ্চয়ে মন দেন। এভাবেই প্রথার ভিতর দিয়েই সামাজিক সমৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়। আর এইসবের মধ্যেই থেকে যায় হিমা রাজার পুত্রবধূর গল্প। মাতৃপূজার এই বিশেষ ক্ষণে, একজন নারীর বুদ্ধিমত্তাকে যে প্রথার ভিতর দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হল, এই কথাটিও এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে স্মরণীয়।